Kanchanjunga Express Accident: বিকল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে বিভ্রাট, গেটম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ রেলের

সিগন্যাল খারাপ হওয়া আর দুর্ঘটনার মাঝের সময়ে প্রায় ৬/৭ টি ট্রেন এই নিয়মবিধি মেনেই চলেছে। সব রকম আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য সেখানে নিশ্চিদ্র সুরক্ষা বন্দোবস্ত করে রাখা আছে। বিস্তারিত জানুন...

Kanchanjunga Express Accident: বিকল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে বিভ্রাট, গেটম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ রেলের
দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: একটা দুর্ঘটনা আর তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্তে নেপথ্যে উঠে আসছে অনেকগুলি তথ্য। কাগজের সিগনাল নিয়ে বিভ্রান্তির জন্যই কী এই দুর্ঘটনা ঘটল? সোমবার ভোরে রাঙাপানি এবং চটেরহাট স্টেশনের মাঝে যে সিগন্যাল সেকশন, তার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কাজ করছিল না। রেলের নথি অনুযায়ী, ভোর ৫ টা ৫০ থেকে। দুর্ঘটনা ঘটল সকাল ৯ টার একটু আগে। অর্থাৎ প্রায় তিন ঘণ্টা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা বিকল অবস্থায় ছিল।

এই তিন ঘণ্টা ধরে কি তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ রইল ? না। এই রকম পরিস্থিতে রেলের সুরক্ষাবিধিতে বলে দেওয়া নির্দেশ মেনেই ট্রেন চালানো হচ্ছিল। সিগন্যাল খারাপ হওয়া আর দুর্ঘটনার মাঝের সময়ে প্রায় ৬/৭ টি ট্রেন এই নিয়মবিধি মেনেই চলেছে। সব রকম আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য সেখানে নিশ্চিদ্র সুরক্ষা বন্দোবস্ত করে রাখা আছে। তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা ঘটে। কখনও যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনও মানুষের ভুলে, কখনও ষড়যন্ত্র হলে। তবে ভারতীয় রেলের দুর্ঘটনার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, রেল কর্মীদের একক বা সম্মিলিত ভুলে দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনায় বেশি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পিছনেও রেলকর্মীদের সম্মিলিত ভুলের সম্ভাবনাই ক্রমে জোরদার হচ্ছে। কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির তদন্ত শুরুর আগেই, রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান মালগাড়ির চালকদের কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছেন। 

প্রথমে কাঞ্চনজঙ্ঘার চালককে দেওয়া হয় টিএ ৯১২ ফর্ম কাগজের সিগনাল। সময় সকাল ৮ টা ২০। ট্রেন ছাড়ল কখন ? ৮ টা ২৭। রাঙাপানির স্টেশন ম্যানেজার এই ফর্মে সই করে বললেন, ট্রেন নিয়ে এগোন। পথে পড়বে মোট ৯ টি স্বয়ংক্রিয় সিগনাল। লাল থাকলেও আপনার এগোনোর অনুমতি রইল। এবারে দেখুন, টিএ ৯১২ ফর্মে স্টেশন ম্যানেজারকে কী কী উল্লেখ করতে হয়। রেলের নিয়মে বলা আছে, দিন তারিখ, ট্রেনের নাম ও নাম্বার দিয়ে স্টেশন ম্যানেজারকে কোন স্টেশন থেকে কোন স্টেশন পর্যন্ত এই কাগজের সিগনাল বৈধ, তা লিখতে হবে।  কোন কোন সিগনাল লাল থাকলেও অতিক্রম করা যাবে, তার তালিকা দিতে হবে ? টা লেখা নেই।  সিগনালিং ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিতরা অনেকেই বলছেন, এখানেই বিভ্রান্তির সূত্রপাত। 

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/Sukanta-Majumdar-confess-that-deepened-on-ed-cbi-may-cause-of-bjp-losses-in-bengal

 টিডি ৯১২ ফর্ম। ফারাক কোথায় ? ফারাক দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। লক্ষ্য করে দেখুন, স্টেশন ম্যানেজারকে কখন টিএ ৯১২ এর বদলে টিডি ৯১২ দিতে বলা হয়েছে। সুরক্ষাবিধি বলছে, কোনও সিগনাল সেকশনে যদি দীর্ঘক্ষণ স্বয়ংক্রিয় সিগনাল বিকল থাকে, তাহলে, টিএ ৯১২ নয়, চালকদের টিডি ৯১২ ফর্ম দেবেন স্টেশন ম্যানেজার। রাঙাপানির স্টেশন ম্যানেজার কিন্তু আড়াই ঘণ্টা পরেও, টিএ ৯১২ দিয়ে কাজ চালাচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি টিএ ৯১২ ফর্ম দিলেন, আর টিডি ৯১২ এর মতো নির্দেশ দিলেন। ধরে ধরে সিগনাল নাম্বার লেখার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে টিডি ৯১২ ফর্মে। 

 রাঙাপানির স্টেশন ম্যানেজার ফর্ম দিলেন টিএ ৯১২, কিন্তু নির্দেশ দিলেন টিডি ৯১২ এর মতো। এতে সমস্যা কোথায় হল ?  রেলের সুরক্ষাবিধি বলছে, টিএ ৯১২ নিয়ে ট্রেন চালালে, আপনাকে গতিসীমা, ব্লু কোড অনুযায়ী মানতে হবে। মানে কী ? মানে হল, প্রথম স্বয়ংক্রিয় সিগনাল পর্যন্ত আপনি দিনের বেলায় ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার এবং রাতের বেলায় ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে যাবেন। এরপর সিগনালের রঙ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। মানে, প্রথম সিগনাল পর্যন্ত গিয়ে আপনি যদি দেখেন তা সবুজ, তাহলে স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চালাবেন। কিন্তু যদি দেখেন সিগনাল লাল, তাহলে থামবেন। দিনে ১ মিনিট আর রাতে ২ মিনিট। আবার পরের সিগনাল পর্যন্ত ওই ১৫ বা ১০ কিলোমিটার গতিতে যাবেন। 

টিডি ৯১২ এর নিয়ম কী বলছে। বলছে, এসব কিস্যু করতে হবে না। আপনি সব লাল সিগনাল ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে চালিয়ে পরের স্টেশন চলে যাবেন। সামনে কোনও ট্রেন নেই। কারণ, টিডি ৯১২ দেওয়া মানে, স্টেশন ম্যানেজার আপনাকে পরের স্টেশনের সঙ্গে কথা বলে লাইন ক্লিয়ারেন্সও দেবেন। মানে ওই সিগনাল সেকশন তখন পুরনো ব্লক সেকশনের মতো কাজ করবে। মানে দুটি স্টেশনের মাঝখানে একই লাইনে একটিই ট্রেন থাকবে। কারণ, সময় বাঁচানোর জন্য, স্বয়ংক্রিয় সিগনাল ব্যবস্থা এমন করে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে দুটি স্টেশনের মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব রক্ষা করে, একাধিক ট্রেন চালানো যায়। অনেকটা বিমান চলাচলের মতো। 

১. মোট ৯ টি সিগনাল পেরোনোর অনুমতি থাকলেও, রাঙাপানি ছাড়ার পর, ৬৫৪ এবং ৬৫২ নাম্বার সিগনাল পেরোনোর পরই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাহলে কি মালগাড়ির চালক ৬৫৪ নাম্বার সিগনাল পর্যন্ত ধীর গতিতে পৌঁছে, সিগনাল সবুজ পেয়েছিলেন ? আর সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চালাতে শুরু করেছিলেন ? ৬৫২ নাম্বার সিগনালও সবুজ ছিল ? তাই কিছুটা এগিয়েই মালগাড়ি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারল কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনে ? হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সম্ভাবনা কম। তাঁরা বরং দ্বিতীয় সম্ভাবনার কথা বলছেন। 

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/RSS-Was-disappointed-due-to-election-result-of-bjp-in-west-bengal-2024

২. রাঙাপানির স্টেশন ম্যানেজারের দেওয়া বিভ্রান্তিকর টিএ ৯১২ ফর্ম আসলে মালগাড়ির চালক টিডি ৯১২ ভেবে ভুল করেন। তিনি আসলে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালিয়ে সব সিগনাল পেরিয়ে যাবেন ভেবেছিলেন। আর সেখানেই ঘটেছে বিপত্তি। শেষমুহূর্তে চালক যখন কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে পেয়েছেন, এমার্জেন্সি ব্রেক লাগিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি। কেন ? মালগাড়ি সবসময়ই যাত্রীবাহী ট্রেনের থেকে ভারী। মালভর্তি মালগাড়ি আরও ভারি। গত বছর করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কথা মনে করুন। কয়লাভর্তি মালগারির ওজন বর্ণনা করতে গিয়ে এক রেল কর্তা তাকে পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এই মালগারিটি কন্টেনার মালগাড়ি ছিল। তাই তার মোমেন্টামও ছিল বিপুল। এই ধরণের মালগাড়ি পুরোপুরি দাঁড় করাতে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ মিটার দূরত্ব লাগে। মালগাড়ির চালক সেই সুযোগ পাননি। 

 কাঞ্চনজঙ্ঘার চালকের টিএ ৯১২ এর নির্দেশ ধরে নিয়েই ট্রেন চালাচ্ছিলেন। তিনি সম্ভবত ৬৫২ নাম্বার সিগনালে দাঁড়িয়েওছিলেন। এরপর ধীর গতিতে এগোচ্ছিলেন পরের সিগনালের দিকে। সম্ভবত এই কারণেই অনেক যাত্রী বলেছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দাঁড়িয়ে ছিল না। ধীরে চলছিল। এই দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন একজন। তিনি ৬৫৪ আর ৬৫২ নাম্বার সিগনালের মাঝের লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান।

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/Justice-Amrita-Sinha-has-called-for-a-report-from-the-state-due-to-allegation-of-no-permission-to-enter-rajbhavan

কাঞ্চনজঙ্ঘা, মালগাড়ির ১৫ মিনিট আগে রাঙাপানি স্টেশন ছাড়লেও কেন মাত্র দুটো সিগনাল পেরোতে পেরেছিল ? মনে করা হচ্ছে, কারণ ট্রেন থেমেছিল ৩ বার। প্রথমে ৬৫৪ নাম্বার সিগনাল, তারপর লেভেল ক্রসিং, তারপর ৬৫২ নাম্বার সিগনাল। এও মনে করা হচ্ছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা লেভেল ক্রসিংএ একটু বেশিই দাঁড়িয়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, কাঞ্চনজঙ্ঘার পর পরই মালগাড়ি পেরোতে দেখলেও, গেটম্যান কেন তা দাঁড় করালেন না, বা চালকদের সতর্ক করলেন না ? জানা যাচ্ছে আজ তদন্তকারীরা ওই গেটম্যানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেবেন।