নবদ্বীপে হদিশ মিলল অস্ত্র তৈরির কারখানার, ঠিক সময়ে যোগান দিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে

সমস্ত উৎসবে যে সমস্ত দেবদেবীর আরাধনা করা হয় সেই সমস্ত দেবদেবীর হাতে যে অস্ত্র লক্ষ্য করা যায়, সেই অস্ত্রের কারখানা রয়েছে নবদ্বীপ শহরের বুকে ছোটো একটি জায়গায়। বিস্তারিত জানুন...

নবদ্বীপে হদিশ মিলল অস্ত্র তৈরির কারখানার, ঠিক সময়ে যোগান দিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে
নিজস্ব চিত্র

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: খাস নবদ্বীপে হদিশ মিলল অস্ত্র তৈরির কারখানার। নবদ্বীপ থানার পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে রমরমিয়ে চলছে অস্ত্র তৈরির কাজ। বাড়ির মধ্যেই কারখানা আর সেখানে তৈরী হচ্ছে রকমারি অস্ত্র। চমকে গেলেন না ? নাহ তবে এ কোনও বন্দুক-গুলি কিংবা ধারালো অস্ত্র তৈরির কারখানা নয়। আদতে এই কারখানায় দেবদেবীর হাতে থাকা বিভিন্ন অস্ত্র তৈরী করা হয়। পিতল কিংবা অন্য কোনও ধাতুর সাহায্যে। সামনেই কালীপুজো, যাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা তুঙ্গে অস্ত্র তৈরির কারিগরদের।  

সদ্য শেষ হয়েছে দুর্গাপুজো। সামনেই আসছে কালীপুজো। এরপরই জগদ্ধাত্রী পুজো, আর তার পরই আসছে নবদ্বীপের অন্যতম উৎসব রাস উৎসব। এই সমস্ত উৎসবে যে সমস্ত দেবদেবীর আরাধনা করা হয় সেই সমস্ত দেবদেবীর হাতে যে অস্ত্র লক্ষ্য করা যায়, সেই অস্ত্রের কারখানা কিন্তু রয়েছে নবদ্বীপ শহরের বুকে ছোটো একটি জায়গায়। নবদ্বীপ থানার একদমই পাশে একটি বাড়িতে পিতলের সেই অস্ত্র তৈরি হয় সারা বছর ধরে। যদিও সারা বছর অস্ত্র তৈরি হলেও, বছরের এই কটা দিন কিন্তু তাদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। মূলত পিতল দিয়ে তৈরি করা হয় এই অস্ত্র। ছেনি হাতুড়ি দিয়ে লাগাতার পিটিয়ে কারুকার্য করে এই অস্ত্র প্রস্তুত করা হয়।

অস্ত্র তৈরির কারিগর রাজু অধিকারী, তিনি এই এলাকারই বাসিন্দা। গত ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই পেশা ছিল তার পূর্বপুরুষদের। আগে এই অস্ত্র অন্য ধাতু অর্থাৎ টিন দিয়ে তৈরি হত। আর এখন বর্তমানে পিতল বা অন্য কিছু মেটাল দিয়ে অস্ত্র তৈরি করা হয়। অন্যান্য বছরে তুলনায় এ বছর তাদের অস্ত্রের চাহিদাও বেশি বলে জানিয়েছেন অস্ত্র তৈরির কারিগররা। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় কাঁচামালের দামও বেশি হওয়ায় একটু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। যেহেতু তাদের তৈরি অস্ত্রের চাহিদাও বেশি তাই সেই অসুবিধা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন বলেই আশাবাদী তাঁরা। এবছর সর্বোচ্চ ৭ ফুট উচ্চতার খাড়া বা অস্ত্র তৈরি করেছেন তাঁরা। তাদের কাছে ছোট থেকে বড় সমস্ত অস্ত্রের মূল্য ভিন্ন।

সর্বনিম্ন অস্ত্রের মূল্য ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকার অস্ত্র তাদের কাছে পাওয়া যায়। সমস্ত পুজোর আগেই তারা নির্দিষ্ট সেই দেবদেবীর অস্ত্র তৈরি করে থাকেন বলে দাবি করলেন রাজু অধিকারী। তাদের তৈরি খাড়া বা অস্ত্র মূলত বাংলা হয়ে বিহার উড়িষ্যা এমনকি ভিন দেশেও পাড়ি দেয়। রাজু অধিকারীর মতে, তার বাড়িতে তিনি সহ আরও ১৫ জন এই অস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই সমস্ত পুজোতেই দেব-দেবীর প্রতিমার সঙ্গে অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আর মাত্র কত দিন বাদেই কালীপুজো , সেই কারণে এখন নাওয়া-খাওয়া ভুলে দেবদেবীর অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা।