ফিরে দেখা ১৯৪৭-এর ইতিহাস, স্বদেশী আন্দোলনে কলকাতা-অনুশীলণ সমিতির ভূমিকা অনস্বীকার্য

বিপ্লবী সংগঠনগুলির অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় শহর কলকাতা। ১৯০৫ সাল। সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতায় ব্যাপক গণবিক্ষোভ ও ব্রিটিশ দ্রব্য বয়কটের ডাকে শুরু হয় স্বদেশী আন্দোলন।

ফিরে দেখা ১৯৪৭-এর ইতিহাস, স্বদেশী আন্দোলনে কলকাতা-অনুশীলণ সমিতির ভূমিকা অনস্বীকার্য
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: আজ দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চোখ রাখলেই যে সমস্ত বীর বিপ্লবীদের কথা শুরুতেই মাথায় আসে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাংলা-পাঞ্জাবের তরুণ তুর্কিরা। মনে পড়ে যায় মাস্টারদা সূর্যসেন থেকে শুরু করে ভগত সিংয়ের মত ব্যক্তিত্বের কথা। যদিও আজ তারা সবাই হারিয়ে গিয়েছেন স্মৃতির অতলে। ৭৭ তম দিবসে সেই ইতিহাসের পাতায় উল্টে দেখব আমরা। 

আজ ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস। ইতিহাস বলছে বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই বাংলা। এই সময় বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির প্রতিষ্ঠা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ শুরু হয় বাংলার কোনায় কোনায়। ১৮৮৩ সাল। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করলেন। এটিই ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সম্মেলন। এরপর ধীরে ধীরে কলকাতা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিপ্লবী সংগঠনগুলির অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় কলকাতা শহর। বাংলা থেকেই স্বদেশী আন্দোলনের দীপ্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অন্যান্য অংশেও। স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে মৃত্যুপথে পাড়ি দেন ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকিদের মতো বীর বিপ্লবীরা।

শুধু তাই নয়, বিপ্লবী সংগঠনগুলির অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় শহর কলকাতা। ১৯০৫ সাল। সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতায় ব্যাপক গণবিক্ষোভ ও ব্রিটিশ দ্রব্য বয়কটের ডাকে শুরু হয় স্বদেশী আন্দোলন। এই সব গণআন্দোলনের তীব্রতা ও দেশের পূর্বভাগে অবস্থিত কলকাতা থেকে দেশ শাসনের প্রশাসনিক অসুবিধার কারণে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর ১৯২৩ সালে ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্টের অধীনে কলকাতার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কর্তৃপক্ষ কলকাতা পৌরসংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে এই পৌরসংস্থার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন চিত্তরঞ্জন দাশ। পরবর্তীকালে সুভাষচন্দ্র বসু, বিধানচন্দ্র রায়, আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রমুখ বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই পদ অলংকৃত করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানি সেনাবাহিনী একাধিকবার কলকাতা শহর ও বন্দরে আকাশপথে আক্রমণ চালায়। 

কলকাতায় জাপানি বোমাবর্ষণের প্রথম ও শেষ ঘটনাটি ঘটে যথাক্রমে ১৯৪২ সালের ২০ ডিসেম্বর ও ১৯৪৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। যুদ্ধের সময় কলকাতায় পঞ্চাশের মন্বন্তরে লক্ষাধিক মানুষ অনাহারে মারা যান। এই মন্বন্তরের কারণ ছিল সামরিক তাণ্ডব, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ১৯৪৬ সালে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের দাবিতে এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কলকাতায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভারত বিভাগের সময়ও বহু মানুষ সাম্প্রদায়িকতার শিকার হন। দেশভাগের পর বহুসংখ্যক মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান এবং সেই দেশের লক্ষ লক্ষ হিন্দু কলকাতায় চলে আসেন।

এর ফলে শহরের জনপরিসংখ্যানে একটি বিরাট পরিবর্তনও সূচিত হয়। এদিকে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসারের ক্ষেত্রে অনুশীলন সমিতি সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বিপ্লবী সতীশ বসু ও প্রমথনাথ মিত্র এই দুজনের সহায়তায় ১৯০২ সালের ২৪ মার্চ কলকাতার হেদুয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় অনুশীলন সমিতি। তবে কলকাতায় প্রথম অনুশীলন সমিতির আখড়াগুলি ১৯০২ সালেই শুরু হলেও পরবর্তীকালে ঢাকায় তা আরও বিস্তৃত হয়। কলকাতার মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকী সশস্ত্র বিপ্লবের পটভূমিকায় সতীশ বসু ও প্রমথনাথের ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। 

তাদের সহায়তাতেই ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহি, চট্টগ্রাম, রংপুর প্রভৃতি জেলায় এই সমিতির শাখা গড়ে ওঠে। ব্রিটিশ অত্যাচার রুখতে 'ইটালির কার্বনারি',  চিনের 'শ্বেতপদ্ম' প্রভৃতি গুপ্ত সমিতির আদলে বাংলায় অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র ১৯০১ সালে নিখিল বঙ্গ বৈপ্লবিক সমিতি তৈরি করেন। পরে সতীশচন্দ্র বসুর উদ্যোগে এবং প্রমথনাথের সভাপতিত্বে তৈরি হয় অনুশীলন সমিতি। এই সময় চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন সহ সভাপতি। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দ মঠ' উপন্যাসে উল্লিখিত 'সন্তান দলের' অনুশীলন প্রবন্ধের নাম থেকেই অনুশীলন সমিতির নামকরণ করা হয়। প্রায় একই সময় বরোদায় অরবিন্দ ঘোষ একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য তিনি যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতায় পাঠান।

বরোদার মহারাজার আর্মি বাহিনী থেকে সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত তরুণ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০২ সালে অরবিন্দ ঘোষের নির্দেশ অনুসরণ করে একটি গুপ্ত দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র কলকাতায় বিপ্লবী দল হিসেবে 'অনুশীলন সমিতি' স্থাপন করেছেন। এই সমিতির কথা যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অরবিন্দ ঘোষকে জানান। এরপর অরবিন্দ ঘোষের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা 'অনুশীলন সমিতি'তে  যোগদান করেন। এতে ভগিনী নিবেদিতার বিশেষ প্রভাব ছিল। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে কলকাতার ছোট ছোট বিভিন্ন সংগঠন 'অনুশীলন সমিতি'তে যোগদান করতে থাকে। ক্রমে তা বিরাট আকার নিলে সংগঠনের কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। 

পরিষদের সভাপতি ছিলেন ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র, সহ-সভাপতি ছিলেন দুজন - চিত্তরঞ্জন দাশ ও অরবিন্দ ঘোষ আর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম দিকে ব্যায়াম সমিতি হিসাবেই অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ সালে মুলত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে তা এক গোপন বিপ্লবী সংস্থায় পরিণত হয়। এই সমিতির লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ভাবে ব্রিটিশ শাসনযন্ত্রকে অচল করে দেওয়া এবং অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া। সমিতির প্রথম দিকে শরীরচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, পরে সেনাবাহিনীর মতো করে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সদস্য যুবকদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে এদের নিয়ে তৈরি করা হয় 'জাতীয় স্বেচ্ছা সৈন্যবাহিনী'। পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হন− বিপিনচন্দ্র পাল, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্দ্রচন্দ্র মল্লিক, সরলাদেবী, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, হেমচন্দ্র কানুনগো, উল্লাসকর দত্ত, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঘা যতীন, রাসবিহারী বসু, ভগিনী নিবেদিতা, কানাইলাল দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রফুল্ল চাকী, ক্ষুদিরাম বসু প্রমুখ।

অন্যদিকে পরাধীন ভারতের মাটিতে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য বহু বীর বিপ্লবীর আত্মবলিদান অবিস্মরণীয়। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা স্মরণ করলে ক্ষুদিরামের সঙ্গেই একযোগে উচ্চারণ করা হয় আর এক তরুণ তুর্কি প্রফুল্ল চাকীর নাম। কলকাতা অনুশীলন সমিতিতে অরবিন্দ ঘোষের ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষ যোগ দেওয়ার পর ব্রিটিশ বিরোধিতা তীব্র আকার নিতে থাকে। বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন সশস্ত্র আন্দোলন ও গুপ্ত হত্যার পক্ষপাতী। ক্রমে অনুশীলন সমিতির মূল ধারার সঙ্গে বারীন্দ্রকুমার ঘোষের মত বিরোধ দেখা দেয়। ফলস্বরূপ অনুশীলন সমিতির ভেতরে একটি শাখা হিসাবে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিপ্লবী নেতারা বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নেতৃত্বে 'যুগান্তর' নামে একটি গোপন সমিতি গঠন করেন। নেপথ্যে পরামর্শদাতা ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ। বিপ্লবী অবিনাশ ভট্টাচার্য, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বসু প্রমুখ যুগান্তর দলে যোগ দেন।

 ১৯০৬ সালের এপ্রিলে এই দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'যুগান্তর' পত্রিকার প্রকাশ হয় যার সম্পাদক ছিলেন স্বামীজীর ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। এই যুগান্তর দল এবং পত্রিকাই প্রথম ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের আদর্শ প্রচার করতে থাকে। যুগান্তর দলের সদস্যরাই প্রথম অত্যাচারী বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে বোমা ও পিস্তলের রাজনীতি অনুসরণ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ কলকাতার মানিকতলা অঞ্চলে ৩২ নং মুরারিপুকুর রোডের এক বাগানবাড়িতে বোমা তৈরির কারখান স্থাপন করেন। হেমচন্দ্র কানুনগো ও প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র উল্লাসকর দত্ত এই বাগানবাড়িতে বোমা তৈরির দায়িত্ব নেন।

১৯০৭ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট'কে হত্যার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়। ১৯০৮ সালে কলকাতার ম্যাজিস্ট্রেট ও পরবর্তীকালে বিহারের মুজাফ্ফরপুরের জেলা জজ ডগলাস কিংসফোর্ড-কে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। প্রথমে কিংসফোর্ডের গার্ডেনরিচের ঠিকানায় পার্সেল বোমা পাঠানো হয়। কিন্তু কিংসফোর্ড তাতে হাত না দেওয়ায় বেঁচে যায়। পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু'কে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল ভুলবশত বোমা লাগে মিসেস ও মিস কেনেডি'র গাড়িতে এবং তাঁরা  মারা যান।  কিন্তু তাঁর সহযোগী ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়েন। পরে বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

 ব্রিটিশ পুলিশ ধরতে এলে আত্মহত্যা করেন প্রফুল্ল চাকি। যদিও তাকে পুলিশ খুন করেছিল বলেও মনে করেন অনেকে। মুজাফ্ফরপুরের বোমা হামলার এই সূত্র ধরেই ২ মে, ১৯০৮, ৩২নং মুরারিপুকুরের বাগানবাড়ি তল্লাশি চালান পুলিশ অফিসার মধুসূদন ভট্টাচার্য। বোমার কারখানা আবিষ্কার করেন। বাগানবাড়ি থেকে গুপ্ত সমিতির সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়৷ যাদের মধ্যে অরবিন্দ ঘোষ ও তাঁর ভাই বারীন্দ্র কুমার ঘোষ সহ মোট ৩৬ জনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মামলা দায়ের করা হয়৷ ১৯০৮ সালের ২ মে থেকে ১৯১০ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলা এই মামলায় ২০৬ জন সাক্ষ্য দেন৷ ১৫৭৫টি নথি জমা পড়ে৷ প্রথম রায় ঘোষণা হয় ১৯০৯ সালের ৬ মে। রায়ে বিচারক বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, ও উল্লাসকর দত্তকে মৃত্যুদণ্ড দেন। উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র কানুনগো, বিভূতিভূষণ সরকার, বীরেন্দ্র সেন, সুধীর ঘোষ, ইন্দ্রনাথ নন্দী, অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য, শৈলেন্দ্রনাথ বসু, হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল, ইন্দুভূষণ রায়ের - দ্বীপান্তর দণ্ড হয়।

১০ বছর দ্বীপান্তর দণ্ড হয় পরেশ মৌলিক, শিশির ঘোষ, ৭ বছর দ্বীপান্তর দণ্ড হয় নিরাপদ রায় , অশোক নন্দী, বালকৃষ্ণ হরিকোণে, শিশির কুমার সেন  এবং কৃষ্ণজীবন সান্যাল ১ বছর কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে দ্বিতীয়বার মামলা শুরু হয়। এরমধ্যে মামলা চলাকালীন জেলের ভেতর থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার অপরাধে রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে ১৯০৮ সালের ৩১ অগস্ট হত্যা করেন কানাইলাল দত্ত এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু। মামলা চলাকালিন ১১ আগষ্ট, ১৯০৮  ফাঁসি হয় বাংলার প্রথম শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর এবং ১০ নভেম্বর, ১৯০৮ তারিখে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন কানাইলাল দত্ত। অপর বিপ্লবী সত্যেন বসুও ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন। এবার আদালতে জোরালো সওয়াল করেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ৷ 

মূলত তাঁর সওয়ালের জেরে মাত্র ১৪ জনের শাস্তির আদেশ হয়৷ আপিলে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তের মৃত্যুদণ্ড রদ হয় এবং তার বদলে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। অরবিন্দ ঘোষ মুক্তি পান। ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাওয়া এমন একজন বীর নারী যোদ্ধার নাম ননীবালা দেবী। যিনি আবার বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দীও বটে। যুগান্তর দলের বিভিন্ন বিপ্লবী কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। বাংলার হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলতে গেলে মাস্টারদা সূর্যসেনের কথা অবশ্যই বলতে হয়। তার নেতৃত্বেই ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ এপ্রিল, চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগারের দখল নেয় বিপ্লবীরা।

পরদিন জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে তুমুল গুলির লড়াইয়ে বিপ্লবী দলের ১২ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু সূর্যসেনের এই কারাঘাত নাড়িয়ে দেয় গোটা ব্রিটিশ রাজকেই। পরে সূর্য সেন ধরা পড়েন এবং বিচারে তার ফাঁসি হয়। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সূর্য ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান বীর যোদ্ধা ছিলেন। বাংলা আর এক অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত। যদিও তিনিও আজ স্মৃতির অতলেই। তিনিই ছিলেন মাস্টারদার প্রিয় পাত্রী, রবীন্দ্রনাথের 'অগ্নিকন্যা'। চট্টগ্রাম দখলে তার অবদানও ছিল অসামান্য। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ঘাটতে গেলে কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না বাংলা ও বাঙালিদের অবদানের কথা।