অফিস ট্যুরে যাওয়াই হল কাল, বাড়ি ফিরল সৌরভের নিথর দেহ

ছাঙ্গু থেকে নাথুলা যাওয়ার পথে তুষারধসে মৃতদের পরিচয় জানিয়েছে সিকিম সরকার। সাতজনের মধ্যে ২ জন বাঙালি রয়েছেন।

অফিস ট্যুরে যাওয়াই হল কাল, বাড়ি ফিরল সৌরভের নিথর দেহ
শোকে পাথর সৌরভের পরিবার (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল:  ছাঙ্গু লেকে বরফ পড়েছে। সেই খবরটা শুনে আনন্দ চেপে রাখতে পারেননি। বরফ পড়া দেখতে যান। তবে সেই যাওয়াই হল কাল। আর বাড়ি ফেরা হল না শিলিগুড়ির বাসিন্দা সৌরভের। প্রবল তুষার ধসে আটকে পড়েন। পরে দেহ উদ্ধার হয় সৌরভ রায় চৌধুরীর। শিলিগুড়ির শক্তিগড়ের বাসিন্দা সৌরভ। বুধবার সকালে সৌরভের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন শিলিগুড়ি মেয়র গৌতম দেব। মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। এই বিষয়ে শিলিগুড়ি মেয়র গৌতম দেব জানান, ছেলেটি অল্প বয়সি ছেলে গতকাল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্ত হবে। রাতেই তিনি যোগাযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সঙ্গে। ছেলেটির কাকা ও মামা গিয়েছে দেহটি আনতে। এরপর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এদিকে সৌরভের সঙ্গে যারা ছিল তাঁরাও আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে সেখানে। 

জানা গিয়েছে, ছাঙ্গু থেকে নাথুলা যাওয়ার পথে তুষারধসে মৃতদের পরিচয় জানিয়েছে সিকিম সরকার। সাতজনের মধ্যে ২ জন বাঙালি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন কলকাতার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে তিনজন নেপাল ও দুজন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। গুরুতর জখম ১৩ জনের মধ্যে ৭ জন বাংলার বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন কলকাতা ও ২ জন শিলিগুড়ি নিবাসী। আর কেউ আটকে রয়েছে কি না তা জানতে এখনও খোঁজ চালাচ্ছে সিকিম প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে ছাঙ্গু থেকে নাথু লা যাওয়ার পথে তুষারধসের কবলে পড়ে প্রাণ যায় ৭ পর্যটকের। জখম হন অনেকে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু করে ভারতীয় সেনা। ৮০টি গাড়ি-সহ ৩৫০ জন পর্যটককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। জখমদের গ্যাংটকের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। 

মঙ্গলবার দু'বার ধস নামে নাথুলা থেকে গ্যাংটক  যাওয়ার সংযোগকারী রাস্তা জওহরলাল নেহরু রোডের উপর। যার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তা। প্রায় সাত থেকে আটটি গাড়ি আটকে পড়ে। যেখানে প্রায় ২০ জন পর্যটক ছিল। তাদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়। এদিকে, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে আৎ নতুন করে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি। ভারী তুষারপাত এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হয় সেনাকে। একদিকে তুষারপাত, অপরদিকে বরফের পুরু আস্তরণে ঢাকা পড়েছে সিকিমের একাধিক পর্যটন স্থল। পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু, নাথুলা, বাবা মন্দির এলাকায় সম্পূর্ণরূপে বরফে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। 

নাথুলা, হরভজন বাবা মন্দির, জুলুক, গুরুদংমার লেক, ছাঙ্গু লেকের মতো পর্যটন স্থলগুলি বরফে ঢেকে রয়েছে। অসংখ্য পর্যটক সেখানে বেড়াতে গিয়ে বর্তমানে ফেঁসে গিয়েছেন। বরফে ঢাকা সিকিমের একাধিক পর্যটন স্থলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সতর্কতা উপেক্ষা করে পর্যটন স্থলগুলিতে গেলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটকদের। রাস্তায় জমে থাকা বরফের জেরে গাড়ি মাঝপথেই আটকে যাচ্ছে। সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতরও। আগামী তিন থেকে চারদিন সিকিমজুড়ে ভারী তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন করে ধস নামার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। আটকে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে ফেরাতে তৎপর প্রশাসন ।