বংশরক্ষার জন্য একাধিক পুরুষকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, আদালতের দ্বারস্থ স্ত্রী

স্বামীর বংশ রক্ষার তাগিদে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ তুলে এবং নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। জানুন বিস্তারিত...

বংশরক্ষার জন্য একাধিক পুরুষকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, আদালতের দ্বারস্থ স্ত্রী
file image

রিমিক মাঝি, কলকাতা: বংশরক্ষার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক পুরুষকে দিয়ে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ নির্যাতিতা মহিলা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ আদালতের। কেন এখনও অভিযুক্ত স্বামী সহ অন্য অভিযুক্তদের হেফাজতে নেওয়া হয়নি?কেন তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে না? প্রশ্ন বিচারপতি অমৃতা সিনহার (Amrita Sinha)।

নির্যাতিতা মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ আদালতের। সেই সঙ্গে বারুইপুর থানা এবং বারুইপুর পুলিশ সুপারের অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ। আগামী ৩০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন রাজ্যকে আদালতে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ বিচারপতি সিনহার।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Calcutta-High-Court-Justice-Rajasekhar-Mantha-Gives-Instructions-To-Provide-Primary-Teacher-Job-With-In-3-Months

বংশ রক্ষার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক পুরুষকে দিয়ে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বারুইপুর থানা এলাকার এক মহিলা। মামলাকারী ওই মহিলা এবং তার স্বামী দু'জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক। ওই দম্পতির দুই সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সেই মারা যায়। নির্যাতিতা ওই মহিলার অভিযোগ, দুই সন্তান মারা যাওয়ার পর তিনি আর মা হতে চাননি। কিন্তু বংশ রক্ষার জন্য তাঁর স্বামী তিনজনকে দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করান। 

ওই মহিলার আরও অভিযোগ, তার জন্য তাঁর স্বামী তাঁর পরিচিত তিন জনের রক্ত পরীক্ষা করান। প্রথমে তাদের মধ্যে থেকে একজনের সঙ্গে ওই মহিলাকে সহবাস করাতে বাধ্য করেন তাঁর স্বামী। কিন্তু তাতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা না হওয়ায় অন্য এক পুরুষকে দিয়ে আবারও তাঁকে ধর্ষণ করান তাঁর স্বামী। স্বামীর বংশ রক্ষার তাগিদে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ তুলে এবং নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Calcutta-High-Court-take-special-initiatives-against-illegal-party-office-and-shop-at-taratala-port-areas

বৃহস্পতিবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সেই মামলার শুনানিতে ওই মহিলা দাবি করেন, থানায় এই নিয়ে তিনি অভিযোগ জানালে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়। স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েও নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন তিনি। নির্যাতিতা ওই মহিলার অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তার স্বামীসহ অন্য অভিযুক্তরাও জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। তারপর থেকেই তিনি আতঙ্কে রয়েছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই মুহূর্তে তিনি বাড়ি ছাড়া। সেই কারণে একাধিকবার আশ্রয় বদল করেছেন। নির্যাতিতার আইনজীবীও আদালতে জানান, এই মামলায় এক অভিযুক্তকে প্রথমে পুলিশ গ্রেফতার করলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দেয়। পরে সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে আবার তাঁকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Justice-amrita-sinha-ask-to-state-government-what-to-did-when-abhishek-banerjee-dharna-infront-of-rajbhavan

শুনানির মাঝেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশ কেন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষুব্ধ বিচারপতি সিনহা বলেন, 'প্রথম অভিযোগেই পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? কেন লিখিত অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করেছিল? অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ? কেন এখনও অভিযুক্ত স্বামীকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি? কোন অফিসার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন? ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না? এত বড় অভিযোগ পাওয়ার পরও কেন তিনি অভিযুক্তদের ছেড়ে দিলেন?'

এরপরই বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্যাতিতা ওই মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। সেইসঙ্গে, এই মামলাতে ১২ জুন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৩ জুন রাত ৯টা পর্যন্ত বারুইপুর থানার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বারুইপুর পুলিশ সুপারের অফিসেরও সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে ১৩ জুনের রিপোর্ট সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এই মামলায় রাজ্যের কাছেও রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ৩০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন আদালতকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্টও জমা দিতে হবে রাজ্যকে। নির্দেশ বিচারপতি সিনহার।