পুলিশের পায়ে ধরে কাতর আর্তি অভিভাবকদের

কয়েকবছর থেকে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষিকা

পুলিশের পায়ে ধরে কাতর আর্তি অভিভাবকদের

বিদ্যালয় খোলা, কিন্তু দীর্ঘ কয়েকবছর থেকে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষিকা। পঠন-পাঠনে ক্ষতি ছাত্রীদের। অনেক ছাত্রী আবার প্রধান শিক্ষিকাকে চেনেনই না। এমনকি পুলিশের পায়ে ধরে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক করার কাতর আর্জি অভিভাবকদের। এমনি আশ্চর্যময় অভিযোগ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলী করুণাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার। বছর খানেক পর শনিবার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে দেখতে পেয়ে অভিভাবকেরা আটকে মারধরের পাশাপাশি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। 

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলী করুণাময়ী বালিকা বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষিকাকে স্কুলে আটকে মারধর করা এবং মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পর প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে এসেছেন। ফলে স্কুলের পঠন পাঠন দীর্ঘদিন ধরে ঠিকঠাক চলছে না। আর যার কারণে দিনে দিনে কুলতলির এই একমাত্র বালিকা বিদ্যায়তনের শিক্ষার আলো ক্রমশ তলানিতে চলে যাচ্ছে। বিগত দিনে যেখানে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৭০০ জন তা বর্তমানে কমে ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকা গার্গী তালুকদার এই স্কুলের অবনতির জন্য দায়ী। জানা গেছে, বর্তমানে স্কুলে পঠন-পাঠন ঠিকঠাক ভাবে হয় না, হয় না স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস। এমনকি প্রধান শিক্ষিকাকে স্কুলের ছাত্রীদের অনেকেই চেনেন না । কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে আসতেন না বলে অভিযোগ।

এদিন শনিবার স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা এসেছেন দীর্ঘদিন পর । এই খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে । তারপরেই ছাত্রীদের অভিভাবকেরা একে একে জড়ো হন স্কুলে। স্কুলের মেন গেটে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে মৈপিঠ কোস্টাল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কোস্টাল থানার ওসি স্বপন বিশ্বাসের পা জড়িয়ে ধরেন ছাত্রীর অভিভাবকেরা। পুলিশকে করুন আর্তি অভিভাবকদের, "স্কুল বাঁচানোর জন্য, স্কুলের পঠন-পাঠন যাতে ঠিকভাবে চলে তার জন্য আপনি কিছু করুন"। গোটা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

পাশাপাশি, স্কুলের এক ছাত্রীর কথায়, প্রায় দেড় বছর থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্কুলের আসতেন না। যার কারণে সিংহভাগ ছাত্রী স্কুল ছেড়ে চলে গেছে। 

অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষিকা গার্গী তালুকদার অভিভাবক ও ছাত্রীদের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন ছাত্রীদের অভিভাবকেরা। এমনকি তাকে মারধোর করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

ইতিমধ্যে শিক্ষিকার হেনস্তার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন অল ইন্ডিয়া হেডমাস্টার হেড মিস্টস  ইউনিয়নের সম্পাদক চন্দন মাইতি। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শিক্ষিকা অসুস্থ ছিলেন। তিনি সব মহলে তার অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে যদি প্রমান হন তিনি দোষী তবে শিক্ষা পর্ষদ থেকে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাই যদি স্কুলে উপস্থিত না থাকেন বা স্কুলের নাই আসতে চান তবে স্কুলের ছাত্রীদের পঠন-পাঠনের হাল কি দাঁড়াবে? যেখানে স্কুলের পড়াশোনার উপর ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেখানে ছাত্রীর সঙ্গে ক্রমশ নিম্নমুখী। যেখানে স্কুলের ছাত্রীরাই প্রধান শিক্ষিকাকে চিনতেই পারছেনা, সেই স্কুলের অবস্থা যে তলানিতে তা বলাই বাহুল্য।