HUL DIWAS 2023: বিদ্রোহের অপর নাম 'হুল দিবস', জানুন বিশেষ এই দিনটির অজানা ইতিহাস

ইংরেজের পাশাপাশি স্থানীয় জমিদার ও মহাজনরা সাঁওতালিদের ওপর চালানো জোর-জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সম্প্রদায়ের তরুণদের রুখে দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন সিধু-কানু।

HUL DIWAS 2023:  বিদ্রোহের অপর নাম 'হুল দিবস', জানুন বিশেষ এই দিনটির অজানা ইতিহাস
বাঁকুড়ায় হুল দিবস পালনের চিত্র (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: জাতিশত্রুদের বিরুদ্ধ সশস্ত্র অভিযান ঘিরে বিপ্লব। আর এই বিপ্লবের নাম হল 'হুল'। সাঁওতালিতে 'হুল'-র অর্থ বিদ্রোহ। কেউ কেউ প্রতিবাদ, লড়াইয়ের নিশানও বলেন।  নিজেদের ন্যায্য লড়াই ছিনিয়ে নেওয়ার ডাক। প্রতিবছর ৩০ জুন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে, বলা ভালো দেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল অক্ষরে নথিবদ্ধ। যা পালিত হয় হুল দিবস হিসেবে।

আজ ৩০ জুন শুক্রবার সারা রাজ্যের সঙ্গে যথাযোগ্য মর্য্যাদায় ১৬৯ তম 'হুল দিবস' পালিত হল বাঁকুড়ার খাতড়া, রানীবাঁধ এলাকায়। এদিন বিভিন্ন সংগঠন, আদিবাসী মানুষজনদের উদ্যোগে খাতড়ার SDO মোড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হুল দিবস পালনের আয়োজন করে। এসডিও মোড়ে অবস্থিত সিধু কানুর মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও আদিবাসী বিকাশ পরিষদ পরিচালনায় 'হুল দিবসের' অতীত ইতিহাসও তুলে ধরা হয় সকলের সামনে। 

ইতিহাস বলছে, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সিধু মুর্মু ও কানু মুর্মুর ডাকে ইংরেজদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সাঁওতাল যুবকরা। নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে যা ভারতে প্রথম সশস্ত্র ও সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই। শুরুর দিনে প্রায় ১০ হাজার থেকে ক্রমে ধারে-ভারে-কলেবরে ২০ গুণ বেড়েছিল যে সংগ্রাম। প্রায় সাত মাস ধরে যে লড়াই চলেছিল। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার ভাগনাদিহির মাঠে যে লড়াইয়ে শুরু। যা বিহারের ভাগলপুর লাগোয়া। কেউ কেউ বলেন তৎকালীন বিহারের ভাগলপুর ও বাংলার মুর্শিদাবাদের একাংশে বিদ্রোহের সূত্রপাত।

ইংরেজের পাশাপাশি স্থানীয় জমিদার ও মহাজনরা সাঁওতালিদের ওপর চালানো জোর-জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সম্প্রদায়ের তরুণদের রুখে দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন সিধু-কানু (Sidho-Kanhu)। তাঁদের সমবেত হতে বলেছিলেন এক জায়গায়। সেখানেই হকের দাবি ছিনিয়ে নিতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন আদিবাসী বীর সন্তানরা।

শুধু সাঁওতালিদের প্রতিবাদই নয়, ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র এই সংগ্রাম পথ দেখিয়েছিল স্বাধীনতার লড়াইয়ে। 'হুল, হুল' আওয়াজ তুলে সাঁওতালিদের যে বিদ্রোহ ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ইংরেজের মনে। ৩০ জুনের সমাবেশের সপ্তাহ খানেক পরেই দারোগা মহেশ লাল দত্তকে খুন করেছিলেন সিধু। তারপর যা ছড়িয়ে পরে। চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদের দিকে এগিয়ে ইংরেজদের ওপর হামলা নামিয়ে আনে তাঁরা। যদিও সেই অভিযানে অনেক মহিলা-শিশুরও মৃত্যুর দায় চাপানো হয় অভিযানের ওপর। যে ঘটনা জানার পর সিধু-কানু তাঁদের ভাইদের কড়া শাসন করেছিলেন বলেও শোনা যায়।