অবৈধ বাজি কারবারের বলি ৭! NIA তদন্তের দাবি BJP-র

দত্তপুকুরে শিউরে ওঠার মত ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। গোটা ঘটনার দায় খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের উপর চাপাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর কী বলছেন তাঁরা? বিস্তারিত পড়ুন...

অবৈধ বাজি কারবারের বলি ৭! NIA তদন্তের দাবি BJP-র
বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভেঙে পড়েছে বাড়ির দেওয়াল (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ভয়াবহ বাজি বিস্ফোরণে ঝলসে মৃত অন্তত ৭। গুরুতর আহত অবস্থায় বারাসত মহাকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ৮ জন। ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশুও। এগরা, বজবজের পর বারুদের স্তুপে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতের দত্তপুকুর এলাকা। রবিবার সকালে তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ওই এলাকা। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বাড়ির চালে উড়ে পড়ে মৃতদেহ। বিস্ফোরণে এক বাড়ির চাল উড়ে যায় অন্য বাড়িতে। এক বাড়ির দেওয়াল উড়ে গিয়ে পড়ল আরেক বাড়িতে। কার্যত লন্ডভন্ড পরিস্থিতি গোটা এলাকায়। প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।  

এদিকে দত্তপুকুরে শিউরে ওঠার মত ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। গোটা ঘটনার দায় খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের উপর চাপাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের মদতে প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে চলছিল অবৈধ বোমাবাজি বানানোর কারবার। শুধু তাই নয়, এগরা-বজবজের পর দত্তপুকুরের ঘটনায় এবার NIA তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র সমীক ভট্টাচার্য। এদিন তিনি বলেন, ''এটা কোনও সাধারণ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ নয়। সমস্ত জেলায় এই ধরনের অবৈধ বাজি কারখানা তৈরি হয়েছে। তৃণমূল মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বোমার উপরে আস্থা রেখেছে। এটা প্রমাণ পঞ্চায়েত নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রী এগরায় গিয়ে ঘোষনা করেছিলেন, সমস্ত বাজি কারখানা নিয়ে ক্লাস্টার তৈরি হবে। তাহলে এটা কী শুধুমাত্র ঘোষণা ছিল? নাকি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ অধঃস্থন পুলিশ কর্তারা মানছেন না?'' 

তিনি বলেন, ''আজকে এই বিস্ফোরণের তীব্রতা, কোন শব্দবাজি তৈরি করতে গেলে স্টোন চিপস লাগে? আজকে ওখানে বিভিন্ন রাসায়নিক, স্টোন চিপস পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে লুকিয়ে বোমা তৈরি হত। বিভিন্ন মারণাস্ত্র তৈরি হত। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। প্রত্যেক জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। নাহলে আজকে এখানে এত বোমা আসছে কোথা থেকে? এর দায়িত্ব নিতে হবে পুলিশকে। এই ঘটনায় দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আর এটার তদন্ত পুলিশ দিয়ে করালে হবে না। আমরা এর NIA তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। NIA তদন্ত হলেও প্রকৃত সত্য, কোন বিস্ফোরক ওখানে ব্যবহৃত হয়েছে সেটা বেরিয়ে আসবে।'' 

দত্তপুকুরের এই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় শুধু BJP নয়। বিস্ফোরণকাণ্ডে 'শাসক যোগের' দাবি করেছেন ISF বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। আইএসএফ বিধায়ক যাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন, সেই কেরামত আলির ছেলে রবিউল আলিরও প্রাণ গিয়েছে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায়। উল্লেখ্য, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বিস্ফোরণের জোরাল শব্দে কেঁপে ওঠে দত্তপুকুরের মোচপোল। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই রমরমিয়ে বাজির কারবার চালানো হচ্ছিল। একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এলাকাবাসীর দাবি, কেরামত কারখানার মালিক। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর ছেলে রবিউল আলির মৃত্যু হয়েছে বিস্ফোরণের ঘটনায়। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন— শামসুল আলি, জাহিদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তির ও তাঁর ছেলের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শামসুলের জমিতে কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। কেরামতই সেই কারখানা চালাতেন। রবিউল ওই কারখানায় কাজ করতেন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে রয়েছে বারাসত থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী, র‍্যাফ ও CID দলের তদন্তকারী আধিকারিকরা।