চোখে দেখতে পান না নিজে, বাকিদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই তার কাজ

হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের পথ দেখাতে পাবলিক অ্যাড্রেসে ঘোষকের ভূমিকায় চাকরি মেলে দৃষ্টিহীন এই মেয়ে সবিতার। এখন সকালের ট্রেনে মাকে সঙ্গে নিয়ে সবিতা নিত্যদিন নিয়ম করে পৌঁছে যান হাওড়া স্টেশনের অফিসে। বিস্তারিত জানুন...

চোখে দেখতে পান না নিজে, বাকিদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই তার কাজ
হাওড়া স্টেশনের ঘোষক সবিতা হালদার (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ব্যস্ত রেল স্টেশন হাওড়া । প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত লেগে থাকে। প্রত্যেক মুহূর্তে অ্যানাউন্সমেন্টের মাধ্যমে যাত্রীদের তাদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার ট্রেন বলে দেওয়া হয়। কতজনই বা জানি এই অ্যানাউন্সমেন্টে বা ঘোষণা করা হয় তার পিছনে কে বা কারা রয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খোঁজ পাওয়া গেল তেমনই একজনের। 

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মছলন্দপুরে শক্তিনগরের বাসিন্দা সবিতা হালদার। চোখে দেখতে পান না সবিতা।  কিন্তু তাতে কী  যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার করে যাচ্ছেন তিনি। মসলন্দপুরে স্থানীয় ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মেধাবী ছাত্রী সবিতা। সবিতার এই অন্ধকার জীবনে, ভরসার লাঠি একমাত্র মা।  স্থানীয় ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মেধাবী ছাত্রী সবিতা। তারপর, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়, প্রতিশোধ নিতে প্রতিবেশী যুবক সবিতার বাড়িতে এসে প্রথমে চোখে বালি ছিটিয়ে ও পরে দু’চোখে পেরেক ফুটিয়ে চিরদিনের মত কেড়ে নেয় দৃষ্টিশক্তি। সবিতার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে নিভে যায় দু’চোখের আলো। 

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/CM-Mamata-Banerjee-targets-pm-modi-over-sandeshkhali-chaos-issue

এরপর বহু জায়গায় চিকিৎসার জন্য ঘুরলেও কোন ফল হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন কোনও ভাবেই দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব নয় সবিতার। মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরে তাকে। সবিতা বলেন, '২০০১ সালে এক যুবক আমাকে প্রপোজ করে এবং আমি না করে দিয়েছিলাম। অন্ধকার জীবনটার মধ্যে থেকেই আমি লড়াই করে আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছি'। বাবা মন্মথ হালদার পেশায় সবজি বিক্রেতা, মা সীতা হালদার নিতান্তই গৃহবধূ। ঘটনার পর দারিদ্রতায় ঘেরা সংসারে নেমে আসে চরম অন্ধকার। সংসারের হাল ধরতে, নিজের কাছে হার না মানার জেদ থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন সবিতা। প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই রেলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।  

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/Calcutta-High-Court-will-take-responsibility-for-appointing-the-Chairman-of-PSC

হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের পথ দেখাতে পাবলিক অ্যাড্রেসে ঘোষকের ভূমিকায় চাকরি মেলে দৃষ্টিহীন এই মেয়ে সবিতার। এখন সকালের ট্রেনে মাকে সঙ্গে নিয়ে সবিতা নিত্যদিন নিয়ম করে পৌঁছে যান হাওড়া স্টেশনের অফিসে। সেখানেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে তাঁর গলায় ঘোষণার মধ্যে দিয়েই পথ দেখান দৃষ্টিহীন রেলের এই মহিলা কর্মচারী। মোবাইলের এলার্ট শুনে, ব্রেইল পদ্ধতি শিখে সময় মেনে আজ অফিসের সব কাজ সামাল দিচ্ছেন দৃষ্টিহীন এই ঘোষক। কাজ শেষে রাত নামতেই মাকে নিয়ে আবারও ট্রেনে করেই ফেরেন বাড়িতে। কোনও দোষ না করেও, অন্ধকার নেমে আসা সবিতার জীবনের লড়াই, বাবা মা ভাই-সহ দারিদ্রতার হালদার পরিবার কে আজ যেন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। তাই সবিতা হালদার যেন আজ বহু দৃষ্টিহীন মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। অফিসের অন্যান্য সহকারী কর্মচারীরাও সবিতার এই লড়াই দেখে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। দৃষ্টিহীন সবিতার এই সাফল্যে যেন আজ গর্ব অনুভব করছে গোটা মছলন্দপুর।