টাটাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ: রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সিঙ্গুরের কৃষকদের

ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরে সোমবার সন্ধ্যের পর থেকে আইনজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরের আধিকারিকেরা।

টাটাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ: রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সিঙ্গুরের কৃষকদের
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: টাটাকে বিপুল অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের এই রায় মেনে নিতে পারছেন না সিঙ্গুরের বহু কৃষক। মঙ্গলবার রায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা। ন্যানো প্রকল্পে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি চাষীদেরও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণ দেবে কে? এখন এই প্রশ্নই তুলছেন তারা। 

২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পাওয়ার পর হুগলির সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। টাটাকে এ বাবদ ১০০০ একর জমি দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরে গাড়ি প্রকল্প গড়তে পারেনি টাটা। গাড়ি প্রকল্প যখন ব্যর্থ হল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার টাটার কাছে জমি ফেরত চেয়ে পাঠায়। টাটা গোষ্ঠী জমি ফেরাতে সম্মত হয়। পাশাপাশি, জমি ফেরানো বাবদ খরচ দাবি করে রাজ্য সরকারের কাছে। জমির দামের সঙ্গেই সেই খরচের অন্তর্গত ছিল ওই জমির পিছনে টাটার বিনিয়োগ করা অর্থও।

 সোমবার আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল রায় দেয় সিঙ্গুরে  ন্যানো গাড়ির কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার জেরে, টাটা মোটরস সংস্থাকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে  হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। টাটা গোষ্ঠীর দাবি, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ হারে রাজ্য সরকারকে সুদের পাশাপাশি দিতে হবে মামলার খরচ বাবদ ১ কোটি টাকাও। তিন মাসের মধ্যে টাকা দিতে হবে রাজ্যকে। আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের এই রায় মেনে নিতে পারছেন না সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা। মঙ্গলবার রায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা। অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্ট যখন জানিয়ে দিয়েছে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণটাই ছিল বেআইনি তখন কিসের ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হল? 

  ২০১৬ সালের ৩০ অগস্ট শীর্ষ আদালত সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে ১২ সপ্তাহের মধ্যে চাষিদের জমি ফেরানোর এবং ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। আদালতে ঐতিহাসিক এই জয়ের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ওই জমিকে চাষযোগ্য করার পরেই চাষিদের হাতে তুলে দেবেন। সেই কথাও রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রশ্ন, ন্যানো প্রকল্পকে ঘিরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুই মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই বিপুল পরিমাণ আর্থিক খরচ করেছে রাজ্য। পাশাপাশি চাষীদেরও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণ দেবে কে? তাঁদের বক্তব্য, শিল্পের বিরোধিতা করে সিঙ্গুর আন্দোলন হয়নি, আন্দোলন হয়েছিল কৃষি জমি বাঁচানোর দাবিতে। তাঁরা এখনও চাইছেন, সিঙ্গুরে শিল্প হোক। 

ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরে সোমবার সন্ধ্যের পর থেকে আইনজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরের আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার উচ্চতর আদালতে যাচ্ছে রাজ্য।