চেলি নদীর পাড়ে প্রতিষ্ঠিত হল আদিবাসীদের প্রথম ধর্মস্থান, হইহই রব ডুয়ার্সে

আদিবাসী সমাজের ধর্মগুরু সিলভেস্টার ওঁরাও স্বপ্নাদেশে এই "শক্তিখুটা" স্থাপনের নির্দেশ পেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

চেলি নদীর পাড়ে প্রতিষ্ঠিত হল  আদিবাসীদের প্রথম ধর্মস্থান, হইহই রব ডুয়ার্সে
ডুয়ার্সের চেল নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে 'শক্তিখুটা' (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: প্রকৃতির উপাসক আদিবাসীদের প্রথম ধর্মস্থান প্রতিষ্ঠিত হল বাংলার ওদলাবাড়িতে। প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ডের মুরমা'র পর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় এই ধর্মস্থানের উদ্বোধনকে ঘিরে রবিবার সকাল থেকে সরগরম ডুয়ার্সের আদিবাসী সমাজ। ওদলাবাড়িতে চেল নদীর তীরে আদিবাসী সমাজের আদি ধরম সরনা পাহান খোড়া' র তরফে অনেকটা শিবলিঙ্গের ধাঁচে তৈরি "শক্তি খুটা"র স্থাপন কড়া হয়। 

জানা গিয়েছে, এই ধর্মস্থানের উদ্বোধন উপলক্ষে যেন মেলার পরিবেশ নদী তীরের বিশাল ফাঁকা এলাকা জুড়ে। আদিবাসী সমাজে অত্যন্ত শ্রদ্ধার বিষয় 'এই শক্তিখুটা' আদতে একটি শাল গাছের অংশ। প্রকৃতির উপাসক আদিবাসী সমাজের মানুষেরা এই শক্তিখুটাতেই পুজো অর্চনার মাধ্যমে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। এদিন পবিত্র এই 'শক্তিখুটা' নিয়ে ওদলাবাড়ির ঘিস নদী থেকে বিশাল এক কলসযাত্রা নতুন এই ধর্মীয় স্থানে এসে পৌঁছয়।  

আরও জানা গিয়েছে, কয়েক হাজার আদিবাসী মহিলা ও পুরুষ এই কলসযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও এ রাজ্যের আদিবাসী সমাজের সর্বোচ্চ ধর্মগুরুর দল তাদের নিজস্ব রীতি মেনে পবিত্র 'শক্তিখুটা' স্থাপন করেন। কথিত আছে যে, আদিবাসী সমাজের ধর্মগুরু সিলভেস্টার ওঁরাও স্বপ্নাদেশে এই "শক্তিখুটা" স্থাপনের নির্দেশ পেয়েছিলেন। তারপর থেকে বন, জঙ্গল, নদী, পাহাড়ের মধ্যে পবিত্র শক্তিখুটা খুঁজে বের করে তা স্থাপন করা হয় ওদলাবাড়িতে।

এর উদ্যোক্তাদের তরফে সুরেশ কেরকেট্টা বলেন, ''স্বপ্নাদেশে পাওয়া জায়গার সঙ্গে ডুয়ার্সের চেল নদী তীরের এই বিশাল জায়গাটির অনেকটাই মিল খুঁজে পেয়েছেন আদিবাসী সমাজের ধর্মগুরুরা।'' 'শক্তিখুটা' স্থাপনের আগে তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখে অবশেষে এই জায়গাটি চিহ্নিত করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন এই ধর্মীয় স্থানটি যে আগামীদিনে আদিবাসী সমাজের কাছে একটি তীর্থক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে তা নিঃসন্দেহ বলা যেতে পারে।


আদিবাসী সমাজের আদি ধরম সরনা পাহান খোড়া'র তরফে অনুষ্ঠানের দুই উদ্যোক্তা চন্দন লোহার ও সুরেশ কেরকেট্টা বলেন, ''প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী আদিবাসী সমাজে এই শক্তি খুটাকে ঐশ্বরিক শক্তির অধিকারী বলে গণ্য করা হয়।'' এদিকে আগামীকাল  অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ মে মাসের ১ তারিখে প্রায় ৭০জন আদিবাসী যুবক-যুবতীর গণবিবাহের অনুষ্ঠানও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ডুয়ার্সের আদিবাসী সমাজের বিশিষ্টজনদের ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে চন্দন লোহার জানিয়েছেন। ডুয়ার্সের বাসিন্দা এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী বুলুচিক বরাইক এবং জন বারলাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে।