মেলে না ভাতা, সরকারি সাহায্য! হাটেবাজারের পচা সবজি খেয়ে দিন গুজরান অসহায় দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ দম্পতির

সার্টিফিকেটের জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ।কিন্তু সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই অভাবী এই পরিবারের।হাট বাজার শেষে পড়ে থাকা পচা শাক-সবজি কুড়িয়ে এসে রান্না করে

মেলে না ভাতা, সরকারি সাহায্য!  হাটেবাজারের পচা সবজি খেয়ে দিন গুজরান অসহায় দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ দম্পতির
বিশুয়া দাস ও তাঁর স্ত্রী কুশমি দাস

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল:  স্বামী চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে প্রায় ১৫ বছর আগে। লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোনওক্রমে সংসার চালাচ্ছেন স্ত্রী। যত দিন যাচ্ছে অভাবের অন্ধকার গ্রাস করছে পরিবারকে। সাত বছর আগে ২০১৭ সালের বন্যায় মাটির ঘর ভেঙে যাওয়ার পর কোনও মতে পাটকাঠির বেড়া পলিথিন দিয়ে বাস করছেন। কিন্তু আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তারা ঘর পাননি। মেলে না বার্ধক্য ভাতা। দৃষ্টিশক্তি হীন স্বামীর জন্য বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সার্টিফিকেট আবেদন করেও পাননি।

সার্টিফিকেটের জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ।কিন্তু সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই অভাবী এই পরিবারের।হাট বাজার শেষে পড়ে থাকা পচা শাক-সবজি কুড়িয়ে এসে রান্না করে কোন রকমে দিন গুজরান করছেন। সরকারি সুবিধা বলতে মেলে শুধু রেশন টুকু। আর কত অভাব হলে সরকারের সাহায্য মিলবে। প্রশ্ন অসহায় স্ত্রীর? মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশুয়া দাস (৬৬)। ১৫ বছর আগে অসুস্থতা জনিত কারণে সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টিশক্তি হারান। তার আগে লোকের জমিতে দিনমজুরির কাজ করতেন। কিন্তু ১৫ বছর ধরে তিনি সম্পূর্ণ অক্ষম।বিশুয়া বাবুর অন্ধত্বের পর থেকে স্ত্রী কুশমি দাস (৫০) লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। লোকের বাড়িতে কাজ করেই কোন মতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন।বয়সের ভাড়ে কুশমিও এখন সেই ভাবে কাজ করতে পারেন না। ছেলে বলরাম দাস মহেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।

এই মুহূর্তে অভাবের অন্ধকার ব্যাপক ভাবে গ্রাস করেছে বিশুয়া দাসের পরিবারকে। অর্থাভাব, খাদ্যাভাব এমনকি থাকার জায়গাটুকুও ঠিক নেই। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর থেকে আর দেওয়াল নেই।পাটকাঠির বেড়া এবং পলিথিন দিয়ে কোন ভাবে থাকছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের জন্য আবেদন করেও মেলেনি। বিশুয়া বাবু বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সার্টিফিকেটের জন্য বারবার আবেদন করেছেন। কিন্তু অভিযোগ তিন হাজার টাকা চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। না দিতে পারায় সার্টিফিকেট হয়নি।বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করেছেন সেটাও মেলেনি। রেশন থেকে মেলে চাল।আর স্থানীয় হাট বাজার থেকে বাজার শেষে পড়ে থাকা পচা শাক সবজি কুড়িয়ে এনে রান্না করে কোন মতে পেটে দেন। কিন্তু এই পরিবারের দিকে নজর পড়েনি জন-প্রতিনিধি বা প্রশাসনের।

প্রসঙ্গত হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায় সম্প্রতি জাল সার্টিফিকেটের জাল চক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে। এই পরিবারের দুরবস্থা প্রমাণ করে দিচ্ছে যে ওই চক্রের জাল কতটা গভীরে। টাকা দিতে না পারায় কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধায় পাননি ওই পরিবার। এদিকে সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির অভিযোগ সারা রাজ্য জুড়ে ঘুঘুর বাসা। তৃণমূল নেতাদের মধ্যে প্রশাসনের অসাধু লোকেরা সব কিছুতেই দুর্নীতি করছে। তাই এই ধরনের অভাবী লোকেরাও বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি কেন্দ্র সরকার ঘরের টাকা বন্ধ রেখেছে। তাই হয়তো সমস্যা হচ্ছে। ওই পরিবারকে ব্লকে নিয়ে গিয়ে সমস্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।