ভোট হিংসায় আক্রান্তদের রাজভবনে ঢুকতে বাধা পুলিশের, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব বিচারপতি সিনহার

ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের প্রতিনিধি দলের পরিচয় প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন নেই। তাতে তারা আবারও হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন বলে মন্তব্য বিচারপতির। জানুন বিস্তারিত...

ভোট হিংসায় আক্রান্তদের রাজভবনে ঢুকতে বাধা পুলিশের, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব বিচারপতি সিনহার
(ফাইল চিত্র)

রিমিক মাঝি, কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত ২০০ জনকে নিয়ে গতকাল অর্থাৎ ১৩ জুন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ কেন তাদের আটকালো এবং ঢুকতে দিলো না, তা নিয়ে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের থেকে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাইকোর্টের। তার তিন সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে মামলাকারীকে। নির্দেশ বিচারপতি অমৃতা সিনহার। মামলার পরবর্তী শুনানি ৯ সপ্তাহ পর। 

যদি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তরা আবারও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চান, তাহলে কতজন যাবেন, কারা যাবেন তা জানিয়ে রাজভবনে তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে। রাজ্যপাল যদি অনুমতি দেন তাহলে তারা রাজভবনের দেওয়া তারিখ ও সময়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পুলিশকে কতজন যাবেন, কতগুলো গাড়ি যাবে, গাড়ির নম্বর আলাদা করে জানাতে হবে। নির্দেশ বিচারপতি অমৃতা সিনহার।

তবে ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের প্রতিনিধি দলের পরিচয় প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন নেই। তাতে তারা আবারও হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন বলে মন্তব্য বিচারপতির। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা ভিতরে যাবেন, তাঁদের শনাক্তকরণের কাজ শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষের কাউকে করতে হবে। রাজ্যের শর্তে রাজি হন বিচারপতি। তিনি জানান, শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষের কেউ শনাক্ত করবেন। তবে কারও পরিচয় নথিবদ্ধ করা যাবে না।

গতকাল অর্থাৎ ১৩ জুন ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত ২০০ জনকে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি করে শুভেন্দু অধিকারী সহ আক্রান্তদের রাজভবনের গেটে আটকে দেয় পুলিশ। গাড়িতে বসে এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সেখান থেকে ফিরে আসেন হিন্দু অধিকারী। রাজ্যপালের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পুলিশি বাধার বিরোধিতা করে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু অধিকারী।

শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সেই মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বলেন- অতীতেও রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে শাসকদলের এক সংসদের নেতৃত্বে পাঁচ দিন ধরে ধরনা হয়েছিল। কিন্তু ১৩ জুন বিকেল চারটের সময় রাজ্যপাল বিরোধী দলনেতা এবং ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত ২০০ জনকে রাজভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাদের গেটের বাইরে আটকে দেয়। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা। 

বিচারপতি অমৃতা সিনহা: আক্রান্তরা কি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে? রাজ্যপাল কি হাউস অ্যারেস্ট? তা না হলে, বিরোধী দলনেতাকে আটকানো হল কেন? 

রাজ্যের এজি বলেন: গতকাল রাজভবনে ঢোকার আগে বিরোধী দলনেতার ব্যক্তিগত সচিব চন্দ্রনাথ রথকে DC জিজ্ঞাসা করেন কতজন ও কটা গাড়ি ভিতরে যাবে। কিন্তু পুলিশকে তিনি কিছু জানাননি। আর বিরোধী দলনেতা ও গাড়ি থেকে নামেননি। এবং রাজভবনে ঢোকার চেষ্টাও করেননি। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেবে দুই এক পা হেঁটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে চলে যান। রাজভবনের সচিবালয় থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছিল বিকেল চারটের সময় বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কয়েকজন রাজ্যপালের সঙ্গে রাজভবনে দেখা করতে আসবেন। সেই অনুমতি রাজ্যপাল দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কারা আসবেন কতজন আসবেন কতগুলো গাড়ি আসবে এবং সেই গাড়ির নাম্বার কি তা পুলিশকে কোনওভাবেই জানানো হয়নি।

 তাছাড়া রাজ্যপাল আজকে মহেশ্বরী ভবনে বিরোধীদের কথায় ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। রাজভবন থেকে প্রতিদিন পুলিশকে রাজ্যপালের সূচি জানানো হয়। বিরোধী দলনেতা জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্যের। অথচ তাঁর পক্ষ থেকেও পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি।

তাছাড়া গতকাল দুপুর ২.৩০ থেকেই রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে মানুষ জড় হতে শুরু করছিল। তাই নিরাপত্তার কারণে রাজভবনের সামনে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড এবং ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় পুলিশকে। পুলিশের প্রথম দায়িত্ব রাজভবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। তাছাড়া রাজভবন থেকে জানানো হয়েছিল বিকেল চারটের সময় বিরোধী দলনেতা আসবেন। কিন্তু রাজভবনের গেটের সামনে একাধিক মানুষকে নিয়ে বিরোধী দলনেতা পৌঁছন বিকেল ৪.৪০ নাগাদ। এর আগেও বহুবার বিরোধী দলনেতা রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তাঁকে আটকাইনি পুলিশ। কিন্তু গতকাল প্রায় ২০০ রাজভবনের ভিতরে ঢুকবেন বলে জানা যায়। তাই তাদের কতগুলো গাড়ি গাড়ির নাম্বার এবং যারা ঢুকবেন তাদের পরিচয় পুলিশের কাছে ছিল না। সেই কারণেই পুলিশ অনুমতি দেয়নি। \

আরও পড়ুন:https://tribetv.in/There-was-no-effects-on-kashmir-tourism-business--due-to-terrorist-attacks

সব শুনে বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন: ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের প্রতিনিধি দলে কারা ছিলেন তাদের পরিচয় কোনভাবেই আপনাদের কাছে প্রকাশ করা ঠিক নয়। কারণ ওদের পরিচয় সামনে এলে তাদের নানারকম হুমকির সামনে পড়তে হতে পারে। তারপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, যদি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তরা আবারও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চান, তাহলে কতজন যাবেন, কারা যাবেন তা জানিয়ে রাজভবনে তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/ED-confiscates-more-properties-linked-to-Partha-Chatterjee

রাজ্যপাল যদি অনুমতি দেন তাহলে তারা রাজভবনের দেওয়া তারিখ ও সময়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পুলিশকে কতজন যাবেন, কতগুলো গাড়ি যাবে গাড়ির নম্বর এবং প্রতিনিধি দলের পরিচয় পুলিশকে আলাদা করেজানানোর কোনও প্রয়োজন নেই। কেন গতকাল বিরোধী দলনেতা সহ ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত প্রতিনিধি দলকে রাজভবনের গেটে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলো, তা নিয়ে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের থেকে রিপোর্ট তলব বিচারপতি অমৃতা সিনহার। সেই রিপোর্টের জবাব তার তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে মামলাকারীকে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৯ সপ্তাহ পর।