ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ করে PF 'দুর্নীতির' অভিযোগে মামলা, ওসিকে তলব বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

তাঁদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগে ওই দুই সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ওই দুই সংস্থার কিছু অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। তারপর জানুন বিস্তারিত...

ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ করে PF 'দুর্নীতির' অভিযোগে মামলা, ওসিকে তলব বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ করে পিএফ ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের মামলায় হেয়ারস্ট্রিট থানার ওসিকে আদালতে তলব করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।

ডেলটা লিমিটেড এবং ওড়িশা রিয়্যালিটি প্রাইভেট লিমিটেড নামক দুই সংস্থার তাঁরা খাতায় কলমে ডিরেক্টর। অথচ সংস্থার আয়-ব্যয়, এমনকি কাজের ধরনটুকু পর্যন্ত তাঁরা জানেন না! দু’টি সংস্থার এই পাঁচ ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই পাঁচ ডিরেক্টরকে বৃহস্পতিবারই জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। ইডির পাশাপাশি সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিসের (এসএফআইও) আধিকারিকদেরও এই ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। 

তাঁদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগে ওই দুই সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ওই দুই সংস্থার কিছু অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে ওই সংস্থার ৫ ডিরেক্টরকে এজলাসে ডেকেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তাদের সংস্থা সম্পর্কে বেশকিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন বিচারপতি। কিন্তু তাঁরা কোনও প্রশ্নেরই যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, দুই সংস্থা সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না এই পাঁচ ডিরেক্টর। সংস্থার আয়-ব্যয়, কাজকর্ম সম্পর্কে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। জুট মিলের সুপারভাইজ়ার থেকে তাঁদের ডিরেক্টর করা হয়েছে। এমনকি কারা ডিরেক্টর হিসাবে তাঁদের নাম প্রস্তাব করেছেন, তাও বলতে পারেননি ওই ৫ জন। তারপরই পাঁচ ডিরেক্টরকে হাইকোর্টের শেরিফের অফিসে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ ইডিকে দেন বিচারপতি। সেখানে কোনও আইনজীবী প্রবেশ করতে পারবেন না। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ মোবাইল ফোন ফেরত পাবেন না। 

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/Man-mysterious-death-at-police-custody-at-murshidabad-areas

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'এই পাঁচ জন এখনও কোনও অপরাধ করেননি বলে মনে হচ্ছে। তবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। মনে হচ্ছে এঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এঁদের সামনে রেখে পিছন থেকে কেউ বা কারা কাজ করছেন। এঁরা চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন।' তবে পাঁচ জনকে এখনই গ্রেফতার করার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি। শেরিফের প্রতিনিধিকে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, পাঁচ ডিরেক্টরের সম্মানহানি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। 

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/Trinamool-Congress-lodge-fir-against-suvendu-adhikari

এসএফআইও-কে দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ করে কী পাওয়া গেল, তা আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।  রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি আদালতে থাকবেন বলেও জানান। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'প্রাথমিক ভাবে কী পাওয়া গেল, তা আমাকে জানাতে হবে। এর নেপথ্যে পাট শিল্পের বড় বড় মাথা রয়েছেন। তাঁরা আমার বদলিও করতে পারেন। লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। এ সব আমি বরদাস্ত করব না। এরপর বৃহস্পতিবার রাতেও ১০টার সময় এজলাসে বসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুনানি চলে প্রায় রাত ১১ টা পর্যন্ত। ৫ ডিরেক্টর কে জিজ্ঞাসা কাদের পর বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসএফআইও আদালত কে জানায় তারা এফআইআর করতে পারবে না। তা শুনে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি। এবং এসএফআইও-কে তিনি শুক্রবার বিকেল ৩টেয় রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন। 

কিন্তু শুক্রবার এসএফআইও আদালতে জানায়, রিপোর্ট দিতে আরও এক দিন সময় লাগবে। অভিযুক্ত দুই সংস্থার বিরুদ্ধে ইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এফআইআর দায়ের না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত শুরু করতে পারেনি। এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এসএফআইও-কে শুক্রবার এফআইআর দায়ের জন্য থানায় অভিযোগ জানাতে বলেন। এসএফআইও শুক্রবার আদালতে জানায়, দুপুর ২টোয় হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়েছিলেন তাঁদের আধিকারিকেরা। থানায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশনামার কপি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির পর এফআইআর দায়ের করার বিষয়টি তারা বিবেচনা করে দেখবে। এর পরই ওই থানার ওসিকে তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।