কার হাতে রাজ্য বিজেপি সভাপতির ভার, বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দু বনাম দিলীপ তরজা তুঙ্গে

শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানোর ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে আরএসএস। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সূত্রে খবর, তারা চাইছে দীর্ঘদিন সংঘের সঙ্গে যুক্ত ও দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই এমন কাউকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানো হোক।

কার হাতে রাজ্য বিজেপি সভাপতির ভার, বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দু বনাম দিলীপ তরজা তুঙ্গে
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রবিবার তৃতীয় মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায় শপথ নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁকে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব।  পাশাপাশি মিলল বঙ্গ বিজেপির অধিনায়ক বদলের স্পষ্ট ইঙ্গিত। বাংলার পরবর্তী রাজ্য সভাপতি কে হবে তা নিয়ে চলছে জোর চর্চা। আবারও কি দিলীপের উপরই ভরসা রাখবেন নাকি শুভেন্দু অধিকারীতে আস্থা রাখবেন বিজেপি নেতৃত্ব? 

নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের ঠাঁই মিলতেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে রদবদল নিশ্চিত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সুকান্তকে বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে হবে। আর পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হিসেবে এই মুহুর্তে দলের মধ্যে চর্চা ও আলোচনায় উঠে এসেছে দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর নাম। দিলীপ বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তণ রাজ্য সভাপতি। তাঁকে সফলতম সভাপতি বলা হয়। তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গ বিজেপির সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছিল বাংলায়। তাই চব্বিশের লোকসভা ভোটে সুকান্ত ও শুভেন্দুদের নেতৃত্বে দল রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে ফের দিলীপকে সভাপতি করার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে দলের মধ্যে। অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে 'ম্যানেজ' করে রাজ্য সভাপতির পদ পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন বলে খবর। তবে পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ ঘোষকেই চাইছে আরএসএস। বঙ্গ বিজেপির আদি অংশ তো বটেই গেরুয়া শিবিরে দাবি উঠেছে আবার ফিরিয়ে আনা হোক দিলীপ ঘোষ ও সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জুটিকে। দিলীপ ঘোষকে ফের করা হোক রাজ্য সভাপতি। আর সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ফের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক করা হোক। 

বর্তমান সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে দলের সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে বলেই খবর। দলের ভিতরেও সেই দাবি উঠেছে। সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্গ বিজেপির সংগঠনে ফিরিয়ে আনার দাবির নেপথ্যে যুক্তিও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে  যে ১৮টি আসন বিজেপি পেয়েছিল তার পিছনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। সেই সময়ে দিলীপ ঘোষ ও সুব্রত চট্টোপাধ‌্যায় জুটির হাত ধরেই সাফল‌্য পেয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু দিলীপ ঘোষ ও সুব্রতবাবুকে বাংলায় দলের দায়িত্ব থেকে সরানোর পরই বঙ্গ বিজেপিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। দুর্বল হয়েছে সংগঠন। বর্তমান রাজ‌্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার  ও সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীদের নেতৃত্বকে ‘অযোগ‌্য’ বলে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের অনেকেই। রাজ‌্য বিজেপিতে কোন্দলও তীব্র আকার নিয়েছে। দিলীপ-সুব্রত জুটি রাজ্যে দলের সংগঠনকে বাড়িয়ে ছিলেন, শক্তিশালী করে তুলেছিলেন বলে দাবি পুরনো বিজেপি নেতা, কর্মীদের। একইসঙ্গে বর্তমান রাজ‌্য নেতৃত্ব বদলের দাবিও উঠেছে দলের মধ্যে। আদি-নব‌্য দ্বন্দ্বে জর্জরিত পদ্ম শিবির। চব্বিশের লোকসভা ভোটে আসন সংখ্যা ১৮ থেকে কমে ১২ তে চলে এসেছে। এক রাজ্য নেতার কথায়, আর দুবছরের মধ্যে ফের রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই আগে থেকেই বঙ্গ বিজেপির সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Sukanta-Majumdar-take-oath-as-central-minister-of-narendra-modi-cabinet

এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানোর ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে আরএসএস। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সূত্রে খবর, তারা চাইছে দীর্ঘদিন সংঘের সঙ্গে যুক্ত ও দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই এমন কাউকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানো হোক। সেক্ষেত্রে দিলীপ ঘোষই তাদের পছন্দের। আরএসএসের ঘরের ছেলে দিলীপ। আবার অন্য একটি খবর ছিল, মেদিনীপুরে উপনির্বাচনে দিলীপকে প্রার্থী করে সেখানে দিলীপ জিতলে তাঁকে বিরোধী দলনেতা করা হতে পারে। কিন্তু সুকান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যাওয়ায় রাজ্য সভাপতি পদেই দিলীপকে নিয়ে এসে সংগঠনে 'জোশ' আনতে চাইছে সংঘ। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী চেষ্টা করছেন রাজ্য সভাপতি হওয়ার। আর শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে বিরোধী দলনেতা করার। সেক্ষেত্রে মনোজ টিগগা সাংসদ হয়ে যাওয়ায় চিফ হুইপ অগ্নিমিত্রা পালকে করার। শঙ্কর ও অগ্নিমিত্রা দুজনেই শুভেন্দু অধিকারীর পছন্দের। কিন্তু আরএসএস ও বিজেপির বড় অংশই রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপকেই চাইছে। দিলীপ আবার সভাপতি হলে পুরোনো সব নেতা কর্মীরা ফের মাঠে নামবে। দলের মধ্যে চরম আকার নেওয়া আদি ও নব্য দ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া যাবে। তাছাড়া, দিলীপ ঘোষকে পছন্দ সকলেরই। অন্যদিকে, সিপিএম থেকে আসা শঙ্কর ঘোষকে বিরোধী দলনেতা চাইছে না আবার দলের বড় অংশই।

 সূত্রের অবশ্য খবর, এখনই বিরোধী দলনেতা থেকে শুভেন্দুকে সরানোর ভাবনা কেন্দ্রীয় নেতাদের নেই। কারণ, শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য সভাপতি পদে বসালে পুরোনোদের বড় অংশ তো বটেই নতুনদের একাংশ তীব্র বিরোধিতা করবে। ফলে দলের মধ্যে কোন্দল আরও বাড়বে। এটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। এদিকে, রাজ্য সভাপতি পদে দলের মহিলা নেত্রী প্রাক্তণ সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নামও চর্চায় রয়েছে বলে খবর। রাজ্য সভাপতি পদে এই প্রথম মহিলা মুখকে নিয়ে আসাও হতে পারে। প্রায় সব অংশেই লকেটের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। লকেটের সঙ্গে আবার শুভেন্দু শিবিরের সম্পর্কও মসৃণ। আবার গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, শুভেন্দু যদি রাজ্য সভাপতি হতে না পারেন, বিরোধী দলনেতা থেকে যান সেক্ষেত্রে দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম উঠেছে চর্চায়। শুভেন্দু শিবিরের ঘনিষ্ট জগন্নাথ কে সভাপতি করার চেষ্টাও চলছে। অন্যদিকে হাল্কা হলেও নাম ভাসছে পুরুলিয়ায় সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Shantanu-Thakur-take-oath-as-a-cabinet-minister-of-Narendra-Modi

তবে 'ওল্ড ইজ গোল্ড' স্লোগান তোলা দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতি পদে আটকাতে আবার শুভেন্দু শিবির মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর বিজেপি সূত্রে। কারণ, দিলীপ সভাপতি হলে তৎকাল বিজেপি ও শুভেন্দু টিমের একচ্ছত্র আধিপত্য আর চলবে না। তবে আরএসএসের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন দিলীপই। উনিশের ভোটে ২৮ জন সাংসদ ও একুশের ভোটে ৭৭ জন বিধায়ক বাংলা থেকে বিজেপি পেয়েছিল দিলীপের জমানাতেই। অন্যদিকে রাজ্য বিজেপির যুব সংগঠন যুব মোর্চার সভাপতি পদেও রদবদল হতে পারে। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ডাঃ ইন্দ্রনীল খাঁয়ের জায়গায় ফের আনা হতে পারে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। সব মিলিয়ে চব্বিশের ভোটে খারাপ ফলের জেরে বঙ্গ বিজেপিতে বড় রদবদল হতে চলেছে।