হয় দায়িত্ব পালন করো, নয় পদ ছাড়ো, কড়া বার্তা সেলিমদের

একাংশ যান্ত্রিকভাবে কাজে অংশ নিয়েছেন। একের পর এক ভোট যুদ্ধে পরাজয়ের পর হতাশা গ্রাস করেছে গোটা সিপিএম পার্টিতেই। গোড়ায় গলদ কোথায় খুঁজতে নেমে পড়েছে আলিমুদ্দিন।

হয় দায়িত্ব পালন করো, নয় পদ ছাড়ো, কড়া বার্তা সেলিমদের
file image

ত্রয়ণ চক্রবর্তী, কলকাতা: বিধানসভা থেকে লোকসভা-একের পর এক নির্বাচনে রক্তক্ষরন অব্যহত সিপিএমের। যতবড় নেতাই হোক, নির্বাচনে যথোপযুক্ত ভূমিকা না থাকাদের বিরুদ্ধে এবার পদক্ষেপের পথে সিপিএম। আগামী ১ মাসের মধ্যে জেলা কমিটিগুলিকে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা চূড়ান্ত করতে হবে। লোকসভার (Lok Sabha Election 2024) যুদ্ধে পরাজয়ের পর খসড়া রিপোর্টে একগুচ্ছ নির্দেশ আলিমুদ্দিনের। 

রান্নায় সব কিছু দেওয়ার পরেও নুন না দিলে যেমন স্বাদের বদলে বিস্বাদই পাওয়া যায় বঙ্গ সিপিএমের অবস্থা বর্তমানে তেমনটাই। প্রবীনের সঙ্গে নবীন প্রার্থী চয়নের পরেও ফলাফল সেই বিগ জিরো। কেন এমন ফলাফল তা খুঁজতে দলীয় বৈঠকে বসেছিলেন মহম্মদ সেলিম (Mohammed Selim) , সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরী ও পলাশ দাসেরা। সেখানে তাঁদের পর্যবেক্ষণ, এড়িয়া থেকে জেলা দায়িত্বে থাকা নেতারা সঠিকভাবে রূপায়ন করেনি দলের কাজ। আর সেই কারণেই মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) ও দমদম (Dum Dum) ছাড়া বাকি সমস্ত জায়গায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে সিপিএমের প্রার্থীর। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/tmc-and-bjp-to-seat-dharna-in-wb-assembly

সদ্য সমাপ্ত সিপিএমের দুদিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে যে মুল্যায়ন - নির্বাচনী লড়াইয়ে যে সব পার্টি সদস‌্য সংগঠনের কাজে সঠিক ভূমিকা পালন করেনি তাদের বিরুদ্ধে এবার কড়া ব‌্যবস্থা নিতে চলেছে বঙ্গ সিপিএম (CPIM)। প্রাথমিক যে খসড়া রিপোর্ট  ট্রাইব টিভির হাতে এসেছে সেখানে উল্ল্যেখ করা হয়েছে ‘নির্বাচনী সংগ্রামে যে সমস্ত পার্টি সদস‌্য যে স্তরেরই হোক না কেন যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেননি, জেলা কমিটিগুলিকে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব‌্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ অর্থাৎ যত বড়ই নেতা বা যে কমিটির সদস‌্যই হোন না কেন, ভোটের কাজে সঠিক ভূমিকা যারা পালন করেননি তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয়স্তরে ব‌্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ‌্য কমিটি।

শুধু তাই নয়, পার্টি অফিসে বসে যারা নেতাগিরি করেন, এলাকায় যান না, সেই সমস্ত নেতাদের সতর্ক করে রাজ‌্য নেতৃত্বের নির্দেশ, ‘পার্টি সদস‌্যদের একটা ভাল সময় জনগণের অভ‌্যন্তরে যেতে হবে। শুধুমাত্র পার্টি দফতরের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে এলাকায় জনগণের মধ্যে সময় ব‌্যয় করতে হবে।’ রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে, পার্টি সদস‌্য ও এজি সদস্যের বড় অংশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা ছিল নির্বাচনের কাজে। একাংশ যান্ত্রিকভাবে কাজে অংশ নিয়েছেন। একের পর এক ভোট যুদ্ধে পরাজয়ের পর হতাশা গ্রাস করেছে গোটা সিপিএম পার্টিতেই। গোড়ায় গলদ কোথায় খুঁজতে নেমে পড়েছে আলিমুদ্দিন। আর সেই প্রক্রিয়া শুরুতেই নির্বাচনে দলের কাজে যারা সঠিক ভূমিকা পালন করেনি সেইসব পার্টি সদস‌্য বা নেতাদের উপর এবার খাঁড়া নামতে চলেছে দলীয়স্তরে।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/t20-world-cup-final-2024-swan-song-of-Rohit-Sharma-and-virat-Kohli-from-cricket-after-t20-wc

জেলা নেতাদের পাঠানো খসড়া রিপোর্টের ৯ নম্বর পাতায় আশু কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ মাসের মধ্যে জেলা কমিটিগুলিকে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা চূড়ান্ত করতে হবে। বিধানসভাভিত্তিক ফলের বিশ্লেষনের ভিত্তিতে এই পর্যালোচনা করতে হবে। জনগণের সঙ্গে গুরুতর বিচ্ছিন্নতায় রয়েছে পার্টি। এটা বিবেচনায় রেখে পর্যালোচনায় জনগণের চাহিদা ও মনোভাব নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জনগণ কোন বিবেচনায় রায় িদয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে জেলার নেতাদের। এই প্রসঙ্গেই আবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হারের পর্যালোচনা করতে গিয়ে শাখা, জেলা ও এরিয়া কমিটির ভূমিকাও দেখতে হবে। শাখা সদস‌্য ও এজি সদস‌্যদের ভূমিকা কি ছিল সেদিকেও নজর দিতে হবে। আর রাজ‌্য কিটির সদস‌্যদের ভূমিকা নিয়ে রাজ‌্য কমিটি পর্যালোচনা করবে। এছাড়াও, এখন থেকেই প্রতিটি বুথে সংগঠন গড়ে তোলা, এলাকার সমস‌্যা চিহ্নিত করে তার িবত্তিতে জনগণকে শামিল করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

আরও পড়ুন:https://tribetv.in/Know-the-full-weather-forecast-of-next-seven-days-in-west-bengal-all-details-are-here 

এদিকে, খসড়া রিপোর্টে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই তৃণমূল বিরোধিতায় যত জোর পড়েছে বিজেপি বিরোধিতায় সেভাবে জোর পড়েনি। প্রচারে বহুক্ষেত্রে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির অনুপস্থিতি ছিল। আর প্রচারের কৌশলেও ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে রাজ‌্য সিপিএমের এই খসড়া রিপোর্টে। বলা হয়েছে, বাইরের প্রচারের দিকে জোর পড়েছে। কিন্তু বাড়ি বাড়ি যোগাযোগে ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও পার্টির মধ্যে ঐক্যের সমস‌্যাও ছিল বলে মেনে নেওয়া হয়েছে খসড়া রিপোর্টে। বলা হয়েছে, পার্টির ঐক্যের সমস‌্যা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঐক‌্যবদ্ধ নির্বাচনী সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। 

পাশাপাশি স্বীকার করা হয়েছে, মহিলা ভোটারদের কাছে পৌছানো ও যোগাযোগের ঘাটতি ছিল পার্টির মহিলা কমরেডদের। লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ‌্য সাথী—র মতো সরকারি প্রকল্পের সাফল্যের কথাও কার্যত মেনে নেওয়া হয়েছে সিপিএমের এই খসড়া রিপোর্টে।