মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপাল মামলার শুনানি শেষ, অন্তর্বর্তী নির্দেশ মুলতুবি রাখল হাইকোর্ট

কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপালের মানহানির মামলার শুনানিতে সোমবার কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে শুনানির শুরুতেই কুনাল ঘোষের আইনজীবী সরকারী মানহানির বিষয়টি খারিজের আবেদন দায়ের করতে চান। জানুন বিস্তারিত...

মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপাল মামলার শুনানি শেষ, অন্তর্বর্তী নির্দেশ মুলতুবি রাখল হাইকোর্ট
file image

রিমিক মাঝি, কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata banerjee) বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সোমবার সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি কৃষ্ণ রাওয়ের বেঞ্চে। শুনানিতে দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে অন্তর্বর্তী নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার কুণাল ঘোষকে হলফনামা দাখিল করতে হবে। তার দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীকে জবাব দিতে হবে। দুই সপ্তাহ পরে এই মামলার শুনানি হতে পারে।

কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপালের মানহানির মামলার শুনানিতে সোমবার কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে শুনানির শুরুতেই কুনাল ঘোষের আইনজীবী সরকারী মানহানির বিষয়টি খারিজের আবেদন দায়ের করতে চান। কিন্তু রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী যুক্তি দেন যে তাঁর অন্তর্বর্তী আবেদনটি প্রথমে শোনা হোক।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Trinamool-Congress-take-special-initiatives-to-celebrate-Lok-Sabha-victory-on-the-date-of-21-July

বিচারপতি কৃষ্ণা রাও অনুমতি দিলে রাজ্যপালের আইনজীবী বলেন, 'রাজ্যপাল সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে। দুই নবনির্বাচিত বিধায়কের শপথগ্ৰহণ নিয়ে রাজ্যপাল চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে কোনও ভয়ের কথা ছিল না। তার পরেও মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পান— এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। এটা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য। নবনির্বাচিত বিধায়করা আগে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজভবনে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতৃত্ব নির্দিষ্ট মন্তব্য করেছেন। তাই নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথগ্ৰহণের অনুমতি দিতে রাজ্যপাল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। 

রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মন্তব্য করে বলা হয়েছে, বিধায়করা নির্বাচিত, রাজ্যপাল নন। এমনকি বলা হয়েছিল যে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পান। কুনাল ঘোষও একটি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। যে রাজ্যপাল দিল্লির আদালতেও লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই ধরনের মন্তব্যের আর অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।' এই মামলায় মামলাকারীর পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে শুধুমাত্র একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ পাস করতে হবে। এই বিষয়গুলো সকলের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। আদালতের বক্তব্য, এজন্য মিডিয়া হাউসগুলোকে এতে পক্ষ করতে হবে।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/ED-Summoned-sheikh-Shahjahan-brother-and-three-others-on-allegation-of-ration-scam-case

মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সৌমেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় পাল্টা সওয়াল করেন, ‘গভর্নরের পক্ষ থেকেও নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য মানহানিকর নয়। তিনি শুধু একটি মন্তব্য করেছেন। সাধারণের স্বার্থে তিনি এই কথা বলেছেন। সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন সবাইকে রাজভবনে যেতে হবে? মহিলারা সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না। মহিলারা তাঁকে সে কথা বলেছেন। এটা মানহানি হতে পারে না। জনসমক্ষে রয়েছে, এমন কথাই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এটা তাঁর বাক্‌স্বাধীনতা। আসলে উনি যে মন্তব্যগুলি করেছিলেন তা ন্যায্য। তাই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

এছাড়াও তাঁরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ব্যক্তিত্ব। তাই তাঁদের বাক্‌স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কোনও মন্তব্যের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা চাওয়া যায় না। সংবাদমাধ্যমেও মন্তব্য করা হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু তাদের এই পিটিশনে পক্ষ করা হয়নি তাই এটি মানহানির স্থলে দাঁড়ায় না। তাই আদালতের এই ধরনের প্রভোলাস পিটিশন গ্রহণ করার কোনও এক্তিয়ার নেই।'

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Several-hawkers-from-Bihar-and-Jharkhand-situated-in-Kolkata-for-their-business

রাজ্যপালের আইনজীবী পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, 'দুই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা শপথ নেবেন। এটা প্রশাসনিক কাজকর্মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেখানে অন্য বিষয় কেন জুড়ে দেওয়া হল? সমস্ত উত্তরদাতারা বলেছেন যে যে মন্তব্যগুলির জন্য আপত্তি করা হয়েছে, তা করা হয়েছিল। কেউ বলেনি যে এই ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়নি।'

এদিন আদালতে কুনাল ঘোষের আইনজীবী বলেন, 'কুণাল ঘোষ যে মন্তব্য করেছিলেন তা মানহানিকর ছিল না।'  সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি কৃষ্ণা রাও অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ মুলতবি রেখেছেন। তবে, বৃহস্পতিবার কুণাল ঘোষের আইনজীবীকে একটি হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালতে। আবেদনকারীকে তার জবাব দিতে হবে। দুই সপ্তাহ পরে শুনানির সম্ভাবনা।