রাজভবনের সামনে নয়, টেলিফোন ভবনের রাস্তায় শুভেন্দুর অবস্থানের প্রস্তাব আদালতের

রাজ্য ও মামলাকারীকে এই নিয়ে তাদের মতামত আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার আদালতকে জানাতে নির্দেশ বিচারপতি সিনহার। আগামী ২৭ তারিখ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

রাজভবনের সামনে নয়, টেলিফোন ভবনের রাস্তায় শুভেন্দুর অবস্থানের প্রস্তাব আদালতের
file image

রিমিক মাঝি, কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের নিয়ে রাজভবনের সামনে ধর্নার অনুমতি পুলিশ না দেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। রাজভবনের নর্থ গেট থেকে ১০ মিটার ছেড়ে উল্টোদিকের টেলিফোন ভবনের দিকে রাস্তায় অবস্থানের প্রস্তাব বিচারপতি অমৃতা সিনহার। রাজ্য ও মামলাকারীকে এই নিয়ে তাদের মতামত আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার আদালতকে জানাতে নির্দেশ বিচারপতি সিনহার। আগামী ২৭ তারিখ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

তবে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে গত ৫ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আইন ভেঙ্গে তৃণমূল যে কর্মসূচি করেছিলেন, তারজন্য আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, না হলে কেন হয়নি, তা‌ রাজ্যকে আলাদা করে জানাতে হবে। এবং ভবিষ্যতে আর কেউ বা কোনও রাজনৈতিক দল যেন রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে ১৪৪ ধারা ভেঙে অবস্থান বা ধর্না কর্মসূচি করতে না পারে তাও রাজ্যকে আলাদা করে লিখিত আকারে আদালতে জানাতে হবে বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানান বিচারপতি অমৃতা সিনহা।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Some-Goon-Attacked-on-Running-Doon-Express-in-Bihar

এদিনের শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, গত ৫ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচ দিন যারা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে বেআইনিভাবে ধর্না দিল তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না? পুলিশের অনুমতিতে একটি আঞ্চলিক দল লক্ষাধিক লোক নিয়ে রাজভবনের সামনে ধর্না করছে। আর একটি সর্বভারতীয় দল সেই স্থানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে চাইলে প্রশাসনিক কারণ (১৪৪ ধারা) দেখিয়ে অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ কোন প্রশাসনিক কারণে একটি আঞ্চলিক দলকে সেখানে সভা করার অনুমতি দেওয়া হল তা জানতে আমরা গত ৬ অক্টোবর আরটিআই করলেও আমরা তার জবাব পাইনি। আমরা বিনা অস্ত্রে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে চেয়েছি। পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। এই দ্বিচারিতা কেন?

তখন রাজ্যের উদ্দেশ্যে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, আপনারা কি ইচ্ছাকৃত ভাবে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি নাকি কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন?

তার উত্তরে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, মামলাকারীরা খুব ভালো করেই জানে যে ওই স্থানে ১৪৪ ধারা লাগু রয়েছে। 

বিচারপতি অমৃতা সিনহা তখন এজির উদ্দেশ্যে বলেন, আলাদা আলাদা মানুষ বা রাজনৈতিক দলের জন্য আপনারা ভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন। নেতীবাচক সমতা কখনওই কাম্য নয়, এটা ঠিকই। কিন্তু, মামলাকারীতো এই বৈষম্যটাই তুলে ধরতে চাইছে। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Delhi-high-court-stay-granted-to-Arvind-Kejriwal-bail-plea

মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, আমরা কোনও সন্ত্রাসবাদী নই। আমরা ভবানীভবন বা নবান্নে ডিজি'র অফিসের সামনে বিক্ষোভ করতে চেয়েছি।
এজি বলেন, নবান্ন ও ভবানীভবনের সামনে খুব ঘিঞ্জি। তাই ওখানে অনুমতি দিলে অফিস কর্মী ও সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে। তবে শনি বা রবিবার করতে চাইলে রাজ্যের কোনও অসুবিধা নেই।

মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, আমরা আইন মেনে শান্তিপূর্ণভাবে ৬ ঘণ্টার জন্য অবস্থান করতে চাই। আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেন দ্বিচারিতা করা হল, তা জানার অধিকার আমাদের আছে। 

দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজভবনের কতটা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা লাগু থাকে তা রাজ্যের কাছে জানতে চান। এবং রাজভবনের নর্থ গেট থেকে ১০ মিটার ছেড়ে উল্টোদিকের টেলিফোন ভবনের দিকে রাস্তায় ধর্নার অনুমতি দেওয়া যায় কি না, তা দুই পক্ষকে আগামীকাল জানাতে বলেন। তবে ৫ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচ দিন ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে যারা ধর্না দিল, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা রাজ্যের থেকে জানতে চাওয়া হবে বলেও বলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সেইসঙ্গে, যাতে ভবিষ্যতে কোনও ব্যক্তি বা দল রাজভবনের ১৪৪ ধারা এলাকার মধ্যে যেন কোনও সভা, অবস্থান বা ধর্না দিতে না পারে তা নিয়েও রাজ্যের থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ চাওয়া হবে এবং আদালত এই বিষয়গুলোতেও দৃষ্টিপাত করবে বলেও জানান বিচারপতি অমৃতা সিনহা।