'গুরু পাপে লঘু দণ্ড'! পুলিশকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

একে 'গুরু পাপে লঘু দণ্ড' হিসেবে দেখছে আদালত। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ, একই অর্ডারে হাতের লেখা এবং পরে কেটে দেওয়ায় প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে কিছু গোলমাল আছে। জানুন বিস্তারিত...

'গুরু পাপে লঘু দণ্ড'! পুলিশকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
কলকাতা হাইকোর্ট (ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিয়ে করতে না চেয়ে আইন পড়তে কলকাতায় হাজরা ল কলেজে ভর্তি হওয়া হুগলির চন্ডিতলার সেই ছাত্রীকে মারধর, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এবার আদালতের নথি বিকৃতির গুরুতর অভিযোগ উঠল। নোটিশ বিকৃত করে এক অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ মামলাকারীর। একইসঙ্গে ওই তরুণী শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ করার পরেও চন্ডীতলা থানা বা হুগলি এসপি অফিস কোনও পদক্ষেপ না করায় একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ ও বাকি তিনজন পুলিশকে সেন্সর করেছেন এসপি। 

একে 'গুরু পাপে লঘু দণ্ড' হিসেবে দেখছে আদালত। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ, একই অর্ডারে হাতের লেখা এবং পরে কেটে দেওয়ায় প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে কিছু গোলমাল আছে। এই নিয়ে শ্রীরামপুর কোর্টের ACJM এর কাছে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠানো হলো। তাঁকে এর ব্যাখ্যা দিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে।

এসপির রিপোর্ট অনুযায়ী, অভিযোগ না নেওয়ায় তিনি বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু সেটা কি যথেষ্ট? প্রশ্ন আদালতের। ২১ থেকে ২৬ জুন বেশ কয়েকটা মেল তাঁর কাছে গেলেও একটাও তিনি কেন পেলেন না? সন্দিহান আদালত। ২৫ জুলাই তদন্তে অগ্রগতির রিপার্ট দিতে হবে পুলিশকে। কেন ৩৫৪ ধারা যোগ করা হয়নি অভিযোগের পরেও? যে মেল এসপি অফিসে গিয়েছিল, সেই মেলগুলি কোর্টের কাছে পাঠানোর নির্দেশ। বিচারপতি অমৃতা সিনহার।

উল্লেখ্য, পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশীর কেউ উচ্চশিক্ষিত নন। কিন্তু হাজরা ল কলেজের ছাত্রী উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হওয়ায় বিয়ে করতে অস্বীকার করায় পরিবারের লোকজনের মারধর, হুমকির অভিযোগ এবং এফআইআর করতে অস্বীকার করে পুলিশ। এই অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ওই ছাত্রী‌। হাজরা ল কলেজের ছাত্রী তাঁর বোনের সঙ্গে পার্ক সার্কাস এলাকায় থাকতেন। সে ভোটের জন্য বাড়িতে গেলে তার তুতো দাদা ও ভাইরা তার ওপর হামলা চালায়। তার হাতে গভীর ক্ষত হয়। শুধুমাত্র তার পরিবার এবং ওই এলাকা থেকে কেউ এতটা শিক্ষিত নয়, কিন্তু সে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী, সেই কারণে এই হামলা বলে দাবি করেন মামলাকারীর আইনজীবী শামিম আহমেদের। গত ১৬ মে ঘটনাটি ঘটে। চণ্ডিতলা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ এফআইআর দায়ের করতে প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করে বলে দাবি মামলাকারীর। আদালতে রিট পিটিশন করার পর গত ১৩ জুন এফআইআর লজ করে পুলিশ।

হাজরা ল কলেজের ওই ছাত্রীর কাজিন ভাইয়েরা চায় না সে পড়াশোনা চালিয়ে যাক এবং তার বিয়ে দিতে চায়। তার গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ‌ গত ১৬ মে যখন ওই ছাত্রী বাজারের যান সেসময় অভিযুক্ত তার ওপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা তাকে বাঁচায় এবং স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। মামলাকারী প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেনি। তবে মামলাকারীর বোন গত ১৭ মে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ।

১৯ মে আবার অভিযুক্তরা মামলাকারীর বাড়িতে যায় এবং তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়। গত ২০ মে আবারও মামলাকারী থানায় অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ফের অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এরপর ২১ মে মেলের মাধ্যমে হুগলির এসপির কাছে অভিযোগ জানানো হয়। এর পরেও পুলিশ কোনও এফআইআর দায়ের করেনি। রিট পিটিশন ফাইল করার পর পুলিশ এফআইআর দায়ের করে এবং এসপি যান মামলকারীর বাড়িতে‌ বলে অভিযোগ। হিউম্যান রাইট কমিশনে অভিযোগ জানান মামলাকারী। সেখান থেকে এখনও কোনও রিপোর্ট পায়নি পুলিশ।

আরও পড়ুন:  https://tribetv.in/Special-Security-of-Ledies-Special-Train-order-to-Calcutta-High-Court

গত শুনানিতে আপাতত পুলিশকেই তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।  এবং যাতে মামলাকারী এবং তার পরিবারের ওপর কোনও হামলা না হয়, সেটাও পুলিশকে সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের একজন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদা সম্পন্ন অফিসারকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দেয় আদালত। সেই সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত কোনোভাবেই যেন মামলাকারীর উপর কোনও চাপ সৃষ্টি না করে, তা দেখা এবং মামলাকারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশও পুলিশকে দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার এই মামলার ওপর নজর রাখবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে আদালত। এই পরিস্থিতিতে ডিআইজি সিআইডিকে এই মামলার তদন্তভার দেওয়ার আবেদন জানান মামলাকারীর আইনজীবী।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Chief-Justice-of-Calcutta-High-Court-has-given-strict-orders-for-the-sale-of-petrol-and-diesel-without-authorization

এই মামলায় চন্ডীতলা থানার ওসি এবং হুগলির এসপির থেকে রিপোর্ট তলব করে কলকাতা হাইকোর্ট। এবং চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের একজন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদা সম্পন্ন অফিসারকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।